সোনার গাঁর মেয়ে
কাজি আফসার উদ্দিন আহমদ
১.
সোনার গাঁর সব সেরা মানুষ বাতাসী।
সরকার বাড়ির সেই সর্বেসর্বা।
শুধু সরকার বাড়ির কেন, সোনার গাঁর সে এক অদ্ভুত আকর্ষণ।
সরকার সাবের এন্তেকালের পর সরকার বউ সরাসরি বাতাসীকে ডেকে এনে তুলেছে আপন বাড়িতে।
সোনার গাঁর সকলের মানুষ তুমি। উপকারী মানুষ। তবু আজ সব হারিয়ে আমি একলাই তোমার সাহায্য চাই বাতাসী।
আগে আমাদের বেঁচে বর্তে থাকতে দাও। তারপর তুমি যা ভালো মনে করবে তাই করবে। আমরা আর বাধা হবো না। বড়ো ঘরের মেয়ে, ঘরের বউ সরকার গিন্নি। গাঁয়ের মেয়ে বাতাসী সব কাজে নিপুণ্য। আর, না করতে পারেনি।
লেগে গেছে সরকার বাড়িতেই।
সরকার বউ তাকে ছাড়া কোন কাজে হাত দিতে সাহস পায় না।
সময় অসময় যখনি একলা, বসে বসে ভাবেন, সরকার বউ, সত্যি লক্ষ্মী মন্ত এই বাতাসী মেয়েটা যা করছে, কোনো মনিবের জন্যে কোনো মাইনে করা মানুষও অতো করবে না।
সোনার দামে বিকোতে পারে বাতাসী, সরকার বউ প্রায়ই একথা ভাবেন।
বাতাসী কাজের মধ্যে হারিয়ে ফেললো নিজেকে।
সদ্য বিধবা মানুষের সংসারে কাজে এসে ভবিষ্যৎ ভেবেই সে কাজেকর্মে ব্যস্ত হয়ে উঠলো। সকল দিকেই প্রখর দৃষ্টি রাখতে লাগলো সে।
ভোরের নাস্তায় পান্তার পরিমাণ কমিয়ে আনলো। বাড়ির ফলফলানি আর কাঠাঁল ভেঙে ভেঙে তা দিয়ে প্রচুর নাস্তা পানির জোগান দিতে ছাড়লো না বাতাসী। কাকপক্ষির মোরগমুরগির জন্যে যে তুষ ছড়ানো হতো খুদ ফেলা হতো, তাও সে দেখেশুনে জমিয়ে যেতে লাগলো যখের ধনের মতো।
গরু বাছুরের বেলাতেও বাতাসীর চোখ জোড়া তীক্ষ্ম হয়ে উঠলো। ভূষি আর খৈল দিলো ঠিকই কিন্তু পরিবর্তে গোবরটা পুরোপুরি নিলো।, খড়কুটো দিলো যেমনি, তেমনি একটা কুটোও বাইরে ফেলতে দিল না।
গরুর গামলায় নুনের ছড়াছড়ি থাকতো, তাও সে বন্ধ করে দিলো ভাতের ক্যানটাও দেখে শুনে গাইগরুকে বুঝেসুঝে বিলোতে লাগলো।
অল্পদিনের মধ্যেই সরকার বাড়ির শ্রী শতগণে ফিরে এলো। (চলবে)