সময় গেলে সাধন হবে না (ধারাবাহিক জীবন কাহিনী)
আমাদের সবকিছু খারাপ। তবুও এই খারাপের মধ্যেও একটা মাদকতা রয়েছে। আমাদের এটা খারাপ, এটা ভালো না, একথা আমরা সারাক্ষণ সোশ্যাল মিডিয়ায় বলে বেড়াই হররোজ। আমরা যারা নানাভাবে বিদেশে আছি বা পড়তে গেছি, তারা সারাক্ষণ বিদেশীদের ব্যবস্থাপনা, জীবনাচরণের প্রশংসায় মত্ত থাকি। কিন্তু বিদেশীরা নিজেদের নিয়ে এতো কর্সান নয়। তারা নিজের দেশকে, দেশের মানুষকে অন্য কারো সাথে তুলনায় যায় না। নিজেদের রাষ্ট্রকে, সমাজকে এতো ছোট করে দেখে না। দেখতে চায় না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যখন বন্দুকের গুলিতে বছরে চল্লিশ হাজারের ওপরে মানুষ মারা যায়, তখন তারা চিন্তিত হয়, প্রতিবাদ করে ঠিকই। কিন্তু কবিতায় লেখে না, ‘এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না’।
আর দুর্নীতির কথা বলবেন? পৃথিবীর কোথায় নেই এই দুর্নীতির করাল গ্রাস? বিশ্বের প্রতিটি দেশে রয়েছে কিছু না কিছু দুর্নীতি।দুর্নীতি না থাকলে টিআইবির মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো চলবে কীভাবে? এসব প্রতিষ্ঠানে যারা কাজ করছেন তাদের কর্মসংস্থান কীভাবে হবে? দুর্নীতি করে, ঋণ খেলাপী হয়ে যারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন, আপনি আমি তাদের নিন্দা করছি সত্য, কিন্তু তারা যে বিপুল কর্মসংস্থান করে দিয়েছেন, বহু পরিবারের অন্ন যোগাচ্ছেন, সেখানে কি নীতিবাক্য কোন কাজে আসে?
তারপরও দেখেন সাধারণ জনগন এই দুর্নীতির প্রতিবাদে কোনো দিন রাস্তায় নেমে আসে না। কারণ আর কিছুই না, আত্মকেন্দ্রীকতা। এখনকার মানুষ খুব বেশি আত্মকেন্দ্রিক। তার সব প্রতিবাদ, হাহাকার, চিৎকার এখন সোশ্যাল মিডিয়ায়। এই সোশ্যাল মিডিয়া মানুষকে সংঘবন্ধ না করে আলাদা আলাদা অগণিত সত্তায় বিভক্ত করে দিয়েছে। মানুষ এখন ব্যস্ত নিজেকে নিয়ে। অন্যের মতামতের সাথে মিল না হলেই বিপরিতধর্মী পোস্ট দেয় সেই মানুষটিকে গালিগালাজ করে। ফলে কোন মতামতেরই মীমাংসা হয় না, ঝগড়া ফেসাদ শুধু দীর্ঘায়িত হয় না, বেড়েই চলে। আর সমাধানের তো প্রশ্নই আসে না। (চলবে)