সাম্প্রতিক প্রকাশনা

বাতওয়ালের ক্ষুধা (ষষ্টদশ পরিচ্ছেদ) ধারাবহিক বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী

আলতামাস পাশা লেখাটি পড়েছেন 653 জন পাঠক।
 বাতওয়ালের ক্ষুধা

ষষ্টদশ পরিচ্ছেদ

মারভিলার সর্বোচ্চ পরিষদের নিদের্শনা আবারও উপেক্ষা করেছে মারভিলার মাল্টি সুপার কম্পিউটার আলট্ররাম ক্রোম সাতশো সাত। আসলে নিজের মেমোরির বিন্যাসটিকে কিছুতেই সে ধ্বংসাত্মক পরিকল্পনায় নিয়োজিত করতে চাচ্ছে না।  পৃথিবীর মানুষ এবং সৌরজগতের বিভিন্ন সভ্যতার সঙ্গে তাদের যোগাযোগ অনাদিকালের। আলট্ররাম ক্রোম সাতশো সাত পৃথিবীর নির্দিষ্ট কিছু আদিবাসীর জীবনযাত্রা প্রণালী বিশ্লেষণ করে অবাক হয়ে গেছে এটি জেনে যে, পৃথিবীর হিসেবে হাজার হাজার বছরের অবিচ্ছেদ্য বন্ধন ছিল মানুষের সঙ্গে এসব সভ্যতার। আলট্ররাম ক্রোম সাতশো সাত তার মেমোরি ডিভাইস থেকে বিশ্লেষণ করে চলে-

প্রশান্ত মহাসাগরের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে ইস্টার দ্বীপ। এই দ্বীপে পারমাণবিক টেকনোলজির ব্যবহার করে পৃথিবীতে যীশু খ্রীষ্টের জন্মেরও আগে ১০০০ মূর্তি তৈরি করা হয়। মাঝে মাঝে পেরুর কাছাকাছি অবতরণ করতে গিয়ে ভালকারবাসীদের মহাকাশ যান অবতরণের স্থান নির্ণয়ে সমস্যায় পড়তে হতো। তাই আকাশের দিকে মুখ করা সারিবদ্ধ মূর্তি তৈরি করা হলো। আজও ইস্টার দ্বীপের সে মূর্তি মানুষকে অবাক করে, কিন্তু মূর্তি বানানোর কারণ বা কারা বানিয়েছিল তা জানা যায়নি।

আলট্ররাম ক্রোম সাতশো সাত এর কারণ সমাধানের কথা ভাবে। ইস্টার দ্বীপের মূর্তিগুলোর ডিজিটাইজ বিশ্লেষণে তৎপর হয়। পৃথিবীর মানুষের পক্ষে আজও জানা সম্ভবপর হয়নি ইস্টার দ্বীপের এসব মূর্তি কারা, কেন তৈরি করেছিলো। তবে মারভিলার কম্পিউটার বিশ্লেষণে জানা যায় ট্রিটেনটিরাম গ্রহ থেকে আগত সালভেনোরা এসব মূর্তি বানিয়েছিলো ইস্টার দ্বীপের আদিবাসীদের নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখার ধর্মীয় পরিবেশ সৃষ্টির উদ্দেশ্য নিয়ে। 

মারভিলার কম্পিউটার বিশ্লেষণ থেকে আরো জানা  যায় যে, মঙ্গলগ্রহ থেকেও একই উদ্দেশ্যে একটি বিশাল স্পেসশিপ পৃথিবীতে এসেছিলো। দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিলে মঙ্গলবাসীদের কিছু নিদর্শন পাওয়া যায় ‘সেতে সিদাদে’। সেখানে পাহাড়ের গুহার গায়ে যেসব ছবি আঁকা পাওয়া যায়, সেগুলো শিরস্ত্রাণ পরা মঙ্গলবাসীদেরই। এখনও দুর্গম পাহাাড়ি এলাকার  ‘হোপি  ইন্ডিয়ানরা’ এক লাল নগরীর গল্প বলে তাদের নতুন প্রজন্মের ছোট ছোট শিশুদের কাছে। ‘হোপি  ইন্ডিয়ানরা’ এখনও যে কাচিনদের কথা বলে থাকে, তারা আসলে মঙ্গলবাসী।

আলট্ররাম ক্রোম সাতশো সাত তার বিশ্লেষণ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখে।  বিচিত্র সব তথ্য তার মেমোরি ডিস্ককে সমৃদ্ধ করতে থাকে। সে জানতে পায়, আদিবাসীদের জীবনে ধর্মের বিশাল ভূমিকা থাকায় ভিনগ্রহের প্রাণীরা তাদের কাছে ছিল দেবতুল্য। প্রতিটি আদিবাসী গোষ্ঠীরই নিজস্ব দেবদেবী ছিল। ফলে সহজেই ভিনগ্রহের বাসিন্দারা তাদের বিভিন্ন দেবদেবীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া যেতো। আদিবাসীদের জীবনযাত্রায় প্রকৃতি নির্ভর মননশীলতা সৃষ্টিতে মঙ্গল ও ভালকানরা বেছে নেয় তাদের খাদ্যাভাস, সংগীতের প্রতি অনুরাগ এবং লোকগাঁথাকে। আদিবাসীদের মধ্যে বীরপুরুষের অভাব ছিল না। নিজেদের বীর পুরুষদের চরিত্রগুলোর বীর গাঁথা এসব আদিবাসীরা ভালকান আর মঙ্গলের প্রাণীদের সাথে বিনিময় করতো।

সময় গড়িয়ে চললো। আস্তে আস্তে পৃথিবীর হোমো স্যাপিয়ান্স মানুষের একটি ধারা আদিবাসী মানুষের চেয়ে অন্যরকম হতে থাকলো। এদের জিন মিউটেশনে এরা উন্নত প্রাণীতে পরিণত হলো। ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন আদিবাসীরা আস্তে আস্তে এদের পদানত হতে থাকলো। নিজেদের অস্তিত্ব গোপন রাখার স্বার্থে আদিবাসীদের রক্ষায় এগিয়ে আসলো না মঙ্গল ও ভালকানের ভিনগ্রহবাসীরা, যদিও পরোক্ষ সাহায্য সহযোগিতা অব্যাহত থাকলো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে যখন যুক্তরাষ্ট জাপানের হিরোসিমা ও নাগাসাকিতে পারমানবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটালো তখন ভালকান গ্রহবাসীরা পৃথিবী রক্ষা আক্রমনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো, কিন্তু মঙ্গলবাসীরা রাজি না থাকায় সেই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন পিছিয়ে যায়।  (চলবে)

পাঠকের মন্তব্য


একই ধরনের লেখা, আপনার পছন্দ হতে পারে

bdjogajog