বর্তমানে সারা পৃথিবীব্যাপী বৃদ্ধি পাচ্ছে শিশু অপরাধীর সংখ্যা। কেন এমনটি হচ্ছে? এমনিতেই শিশুদের আগ্রাসী হবার পেছনে শিশু মনোবিজ্ঞানীরা সামাজিক বা ঘরোয়া পরিবেশকে দায়ী করে থাকেন। তার উপর সামাজিক পরিবেশের সঙ্গে কম্পিউটার ও মোবােইল গেমসের মত আধুনিক প্রযুক্তিগত কারণটি যুক্ত রয়েছে বলে মনোবিজ্ঞানীরা দাবি করেন। দুনিয়া জুড়ে শিশুরা আধুনিকতার নামে যে ব্যাপক হারে কম্পিটার বা মোবাইল গেমস ব্যবহার করছে তাতে করে মনোবিজ্ঞানীরা রীতিমত উদ্বিগ্ন হচ্ছেন।
আজকের বেশীরভাগ আধুনিক বাবা-মা মনে করেন যে কম্পিটার বা মোবাইল গেমসের ব্যবহার শিশুদের বাইরের খারাপ পরিবেশ থেকে দূরে রাখবে। অর্থাৎ ঘরের শিশু ঘরেই বাবা-মার সামনেই থাকবে। কিন্তু বাবা-মার সামনে থেকেও শিশুরা যে মাদকাসক্তির মতো কম্পিউটার গেমসের ক্ষতিকর আসক্তিতে ভুগতে পারে তা অনেকেই জানে না।
কম্পিউটার ও মোবাইল ব্যবহার নিয়ে মনোবিজ্ঞানীরা যে আশংকা প্রকাশ করেছেন তা হচ্ছে কম্পিউটার ও মোবাইলের নিয়মিত ব্যবহারের ফলে একটা সুস্থ সুন্দর মন অর্জন করার পরিবর্তে শিশুরা অর্জন করবে আগ্রাসী মন। কম্পিউটার ও মোবাইল যে মাদকাসক্তির মতো শিশুদের আক্রান্ত করতে পারে তার পূর্বাভাস শিশু মনোবিজ্ঞানীরা পেয়েছেন বলেই তারা কম্পিউটার ও মোবাইল গেমসের ক্ষতিকর দিকগুলো নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন।
শিশুদের কম্পিউটার বা মোবাইল ব্যবহার কি মাদকাসক্তির মতো ক্ষতিকর?
শিশু মনোবিজ্ঞানী গ্রিফিথস বলেন, এটি বোকামি হবে যদি বলা হয় যে, একদিনে পাঁচ ঘন্টা করে কম্পিউটার গেমসের ব্যবহার শিশুদের আচরণের ওপর প্রভাব ফেলবে না গ্রিফিথস ১১ থেকে ১৬ বছরের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে গবেষণা চালিয়ে দেখেন যে এদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশ ছেলেমেয়ে সপ্তাহে 30 ঘন্টা সময় ব্যয় করে কম্পিউটার বা মোবাইল গেমসে। এসকল ছেলেমেয়ের বাবা-মায়েরা আজ উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করে জানাচ্ছেন যে তাদের ছেলেমেয়েরা দিনে দিনে কম্পিউটার বা মোবাইল গেমসের প্রতি এত অধিক সময় ধরে আসক্ত যে এতে তাদের স্বাস্থ্যগত সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। বাবা-মারা আরও জানাচ্ছেন যে কম্পিউটার বা মোবাইল গেমস খেলার ফলে তাদের ছেলেমেয়েরা সামাজিক দক্ষতা বৃদ্ধি ও বিকেলের সতেজ বায়ু গ্রহণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
শিশুদের ক্ষেত্রে কম্পিউটার বা মোবাইল গেমস এর এ ধরণের পরিণতির জন্য শিশু মনোবিজ্ঞানীরা বাবামাকে দায়ী করেন। বিশেষজ্ঞরা বলেন বাবা-মা যদি শিশুদের কম্পিউটার বা মোবাইল ব্যবহারে একটু সর্তক হন তবেই কম্পিউটার বা মোবাইল শিশুদের জন্য ক্ষতিকর হবে না। এখন দেখা যাক কি ধরণের আচরণে বোঝা যাবে যে শিশুরা কম্পিউটার বা মোবাইল আসত্তিতে আক্রান্ত।
বর্হিগামীতা: এটি হচ্ছে ব্যক্তি জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শিশুরা এসব বিষয়ের আদৌ চিন্তা করে কিনা বা বর্হিগামী কিনা সেটা দেখার বিষয়।
মেজাজ পরিবর্তনে যখন শিশুটির আনন্দ বেদনায় কম্পিউটার বা মোবাইল গেমসের ভূমিকা দেখা যায় তখন বুঝতে হবে যে, শিশুটি মদের মতোই কম্পিউটার বা মোবাইল আসক্তিতে ভুগছে।
একই কাজের পুনরাবৃত্তি: কম্পিউটার বা মোবাইল এর কোন খেলা যদি শিশুটি বার বার খেলতে চায় তখনই ধরে নিতে হবে যে শিশুটি আসক্তিতে আক্রান্ত।
আসক্তিজনিত উপসর্গ: কোনো শিশুকে : কম্পিউটার বা মোবাইল গেমস থেকে বিরত রাখার পর যদি শিশুটি মাথাব্যথা, বমিবমি ভাব বা বিরক্তিকর মেজাজে ভোগে তখনই বুঝতে হবে যে, শিশুটি : কম্পিউটার বা মোবাইল গেমস আসক্তিতে ভুগছে।
দ্বন্দ্বভাব: যখন কোনো শিশু বুঝতে পারে যে সে একই কাজ বার বার করছে কিন্তু কাজটি করা থামাতে পারছে না, তখনই মনে করতে হবে যে শিশুটি আসক্ত।
বদঅভ্যাসের পুনরাবৃত্তি: আসক্তিপূর্ণ কোনো কাজ থেকে বিরত থাকার পরও যদি দেখা যায় আসক্ত শিশুটি আসক্তিপূর্ণ কাজে সহজেই জড়িয়ে যায় তাহলে বুঝতে হবে এটির পুনরাবৃত্তি হচ্ছে।
এধরনের আসক্তি িদূর তরার জন্য মনোবিজ্ঞানী গ্রিফিথস আসক্তিজনিত সিনড্রোমে আক্রান্ত বাবা-মাকে এই পরামর্শ দেন যে কম্পিউটার বা মোবাইল গেমস আসক্তিজনিত সমস্যা দূর করার জন্য বাব-মাকে তাদের ছেলেমেয়ের সাথে আলাপআলোচনায় বসতে হবে। একদিনে এই আসক্তি দূর করা সম্ভবপর নয়। এর জন্য প্রতিদিন কম্পিউটার বা মোবাইল গেমস খেলার সময় দু’ঘন্টা করে কমিয়ে আনতে হবে এবং হোমওয়ার্ক করার পর গেমসটিকে শিশুদের কাছে উপহারের মতো উপস্থাপন করার মতো অভ্যাস বাবা-মায়েদের গড়ে তুলতে হবে। কারণ সংঘর্ষ বা যুদ্ধভিত্তিক গেমসগুলো সন্ত্রাসের প্রতি শিশুদের সংবেদনশীল করে তোলে। কম্পিউটার বা মোবাইল গেমস এর কিছু কাহিনী শিশুদের কিছুটা জ্ঞান দেয়।কেউ হয়তো শুধুই আনন্দ পায়, অন্যরা হয় উগ্র স্বভাবের। বাস্তব জীবনে এর প্রভাব নেতিবাচক। তবে শিশুরা হোমওয়ার্ক, খেলাধূলাসহ বিভিন্ন ধরনের কাজ অপেক্ষা কম্পিউটার বা মোবাইল গেমস এর অ্যানিমেশনগুলো ক্ষুধার্তের মতো গলাধঃকরণ করে।
তা’হলে কম্পিউটার গেমস কি একপ্রকার আসক্তি? মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন যে, এটা একপ্রকার আসক্তিই বটে। এখানে শুধুমাত্র মস্তিষ্কই কাজ করে না এগুলো দেখার পর ইমেজ তৈরি হয় বা স্নায়ুকে উদ্দীপ্ত করে। অর্থাৎ কম্পিউটার গেমস দেহ ও স্নায়ুর ওপর পুরোমাত্রায় কাজ করে। সুতরাং কম্পিউটার বা মোবাইল গেমসকে শুধু খেলা বা বিনোদন হিসেবে নেওয়া যাচ্ছে না।। তাই বৃহত্তর স্বার্থে সন্ত্রাসমূলক কম্পিউটার বা মোবাইল গেমস প্রতিরোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে এটাই প্রত্যাশা। কোমলমতি শিশুরা যেন আর বিপথগামী না হয়। সংঘাত বা সন্ত্রাসবিরোধী হয়ে সুস্থ স্বাভাবিকভাবে যেন বেড়ে ওঠে আজকের শিশু এটাই হোক আমাদের অঙ্গীকার।