সাম্প্রতিক প্রকাশনা

এ্যামির নব জীবন

অন্যন্যা লেখাটি পড়েছেন 1388 জন পাঠক।
 প্রথম অধ্যায়

বাড়িতে খুব হৈচৈ কান্নাকাটি। প্রায় ১০০ জন বিভিন্ন বয়সের মানুষ উঠানে ভিড় করেছে। তিন বছরের ছোট এ্যামি পানিতে ডুবে গিয়েছিল, পুকুরের পানি স্বচ্ছ ও পরিস্কার ছিল বলে দাদি ঘাটে কাজে গিয়ে দেখে ঘাট থেকে কিছুটা দূরে পানির নীচে এ্যামি মাটির সাথে...... তৎক্ষণাৎ দাদি পানিতে নেমে এ্যামিকে উঠানে নিয়ে এসে চিৎকার করছেন...... আমার এ্যামি আর নাই। বাড়ির উঠানে গ্রামের লোকজনে ভরে গেছে। এ্যামির কোন শ্বাস-প্রশ্বাস পড়ছেনা।

প্রথমে তার ছোট কাকা এ্যামিকে মাথায় করে কিছুক্ষণ লাফায়, কোন কাজ হয়না। পরে তার বাবা পা ধরে ঘুরায়, তাতেও যখন কোন লাভ হয় না। তখন সবাই বলেঃ ও মারা গেছে রেখে দাও মাটিতে। এ্যামির মা নীরব দৃষ্টিতে দেখছিল সবকিছু, আর তার শ্বাশুরি তাকে মারছিল ও বকাঝকা করছিলেন (যা জমিতে কাজ করতে.. বাচ্চাগুলোর দিকে কোন খেয়াল নাই ইত্যাদি ইত্যাদি)। যখন এ্যামির মা দেখলো যে তার মেয়েকে মাটিতে রেখে দেওয়া হচ্ছে - মারা গেছে বলে, সে অমনি দৌঁড়ে এসে এ্যামিকে তার বাবার হাত থেকে নিজের মাথায় নিয়ে লাফ শুরু করে উঠান ভরা মানুষের সামনে। তিনটা লাফ দিতেই এ্যামির নাক মুখ দিয়ে পানি বের হতে শুরু করে, শুরু হয় তার শ্বাসপ্রশ্বাস। নতুন জীবন ফিরে পেল এ্যামি। সবার মধ্যে স্বস্তি  ফিরে এল।

এ্যামির জন্ম এক প্রত্যন্ত গ্রামে । তার বাবা ছিলেন একজন হোমিওপ্যাথ ডাক্তার। এ্যামি ছয় ভাইবোনের মধ্যে তৃতীয় । এ্যামিদের সংসারটির পুরো দায়িত্ব ছিল এ্যামির মার উপরে, কারণ এ্যামির বাবা ডাক্তারি করতেন ঠিকই কিন্তু মানুষকে বিনা পয়সায় ওষুধ দিতেন। ছোট্ট এ্যামি তখন তার বাবাকে জিজ্ঞাসা করতো বাবা তুমি কেন মানুষের কাছ থেকে টাকা নাও না ওষুধ দিয়ে? বাবা বলতেন, মা, ওরা গরিব মানুষ, ওরা আমাকে টাকা দিবে কীভাবে.. এ্যামি বলতো বাবা তুমি জমিতে কাজ করা না কেন ? মা কেন একা একা জমিতে কাজ করে? জমিতে মা এতো কষ্ট করার পরে আবার রান্নাও করে আমাদের জন্য। মা একা এত কষ্ট করে সংসার চালায়.. আমাদের চার ভাইবোনদের স্কুলে পাঠায়। বাবা উত্তরে বলেন, আমার জমির কাজ ভাল লাগেন তাছাড়া আমি রোদ সহ্য করতে পারি না।

এ্যামির স্কুলের দুরত্ব তার বাড়ি থেকে প্রায় দেড় মাইল দূরে। সেও তার বড়বোন পায়ে হেঁটে প্রতিদিন স্কুলে যায়। এ্যামি বাবার পৈত্তৃক বাড়িসহ জমির পরিমান মোটামুটি ভালই ছিল। ভাল থাকলে কি হবে বাবা..?? বাবা তো কখন জমির কাজ করতো না ! মা‘ই নিজে জমির কাজ করতো এবং কিছুু জমি বরগা দিয়ে কোন রকমভাবে সংসার চালাতো।
বাবা ঘরের ধান বিক্রি করে হোমিও ওষুধ কিনতো ডাক্তারী করার জন্য। এ নিয়ে প্রায় সময়ই অশান্তি লেগে থাকতো মার সাথে। এ্যামির বাবা গ্রামের বিভিন্ন সামাজিক কাজ করে বেড়াতো যেমন গ্রামে যে বাঁশের সাঁকো (চার) তা পুরানো হয়ে গেলে বা একটি বাঁশ ভেঙ্গে গেলে সে সেই কাজটি আগে করতো । নিজের বাগানের বাঁশ কেটে অথবা বাগানে বড় বাঁশ না থাকলে সে বাঁশ কিনে নিজে গিয়ে সাঁকো মেরামত করত। পাশের বাড়ির কেউ যদি না খেয়ে আছে তা জানতে পারতো তাহলে বাড়ি এসে তার ভাগের খাবার নিয়ে গিয়ে ঐ মানুষটিকে খাওয়াতেন। কখন যদি শুনতো পাশের বাড়ির ক্উে অসুস্থ অথচ ডাক্তারের কাছে যায় না টাকা নেই বলে.. বাবা তখন নিজের তাগিদে ঐ বাড়িতে নিজের ঔষুধ নিয়ে যেত ও তাকে ওষুধ খাইয়ে সারিয়ে তুলতো। এই কাজগুলোতেই যেন তার সব আনন্দ...

বাবারএকটি কাজে খুব অবাক হতো এ্যামি, তার মা পিঠা বানাতো কোন পর্বকে উপলক্ষ করে এবং এ্যামি বাবার জন্য পিঠা নিয়ে আসতো প্লেটে করে বলতো বাবা এই নাও পিঠা খাও। বাবা তখন জিজ্ঞেস করতো, তোর কাকাদের ঘরে পিঠা দেওয়া হয়েছে? যদি সে বলতো যে দেওয়া হয় নি তবে বাবা বলতো আমি খাব না এই পিঠাটা তোর কাকার ঘরে দিয়ে আয় কিন্তু দেখিস তোর মা যেন না জানে”। 

এ্যামিরা ছয়ভাইবোন স্কুলে যায়, স্কুলের বেতন বইখাতা দেওয়া মার জন্য খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার ছিল। তবু সে চাইতো তার সব ছেলেমেয়ে যেন মানুষের মত মানুষ হয়। বড় ভাইয়ের পড়াশুনার প্রতি বেশি একটা মনোযোগ ছিল না। সে ষষ্ট শ্রেণী পাশ করার পর আর স্কুলে যেত চাইতো না সকাল হলে সে যেত জমির কাজে। মা অনেক চেষ্টা করেও তাকে আর পড়াশুনা করাতে পারলো না। সেই ছোট্ট বয়সে থেকেই বড় ভাই সংসারের হাল ধরলো । সংসারে কিছুটা সচ্ছলতা এলো। জমি যা ছিল তা নিজেরা সব চাষ করে ধান, পাট অন্যান্য ফসল যা হয় তা দিয়ে নিজেদের ভালভাবে চলে যায়। এ্যামি ও তার বড় বোন একই সঙ্গে এসএসসি পাশ করে। ও তারা দু’জনে ঢাকায় চলে আসে চাকুরীর সন্ধানে।


দ্বিতীয় অধ্যায়

এ্যামির জীবনে শুরু হয় কঠিন বাস্তবতা দিয়ে। সে ঢাকায় এসে উঠে তার এক খালার বাসায়। খালা চেষ্টা করে এ্যামিকে নার্সিংএ ভর্তি করে দেওয়ার জন্য। নাসিং এ তার ইচ্ছা থাকা না  স্বত্বেও খালা প্রেরণায় ও চেষ্টায় ভর্তি পরীক্ষা দেয় কিন্তু ভর্তি পরীক্ষায় এ্যামি সুযোগ পায় না। 

এ্যামির আত্মিয় কাছে থেকে তেমন একটা সহযোগিতা পায় না। বাধ্য হয়ে সে গার্মেন্টস এ কাজ নেয়। এ্যামির খালা এ্যামি ও তার বড়বোনের জন্য একটি হোস্টেলে ব্যবস্থা করে দেয়। হোস্টেলে থেকে সে গার্মেসে কাজ করে আর ভাবে কীভাবে সে তার ভবিষ্যত গড়বে। প্রায় এক বছর গার্মেসে কাজ করার পর সে তার খালাকে বলে তাকে অন্য কোথাও চাকুরির ব্যবস্থা করে দিতে। তার খালা তখন বিদেশী সংস্থার এক কর্মকতার বাসায় ্এ্যামিকে নিয়ে যায় এবং চাকুরীর জন্য অনুরোধ করে। এ  সংস্থার  একটি  প্রজেক্টে পার্ট-টাইম প্রি-স্কুলে শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দিলেন। চাকুরী পেয়ে খুব খুশি এ্যামি, কারণ সে এখন তার পরাশুনা চালাতে পারবে। সে হোস্টেলে থেকেই পার্ট-টাইম চাকুরী করে পাশাপাশি পড়ালেখা চালায়। অবশেষে একদিন সে এইচএসসিও পাস করে। 

একদিন এ্যামির ছোট ভাই প্রবাল এইচএসসি পাশ করে ঢাকায় এসে উপস্থিত হয়। ঢাকা কলেজে ইংরেজি সাহিত্যে অর্নাস ভর্তি হয়। এ্যামি আরো সমস্যায় পরে কারণ, ভাইটিকেও কিছু সাহায্যে করে হবে তাকে। ভাই প্রবালও হোস্টেলে থাকে এবং দু‘টি টিউশনি করে কিন্তু তাতে তার চলে না। বিভিন্ন সময় বোনের কাছে এসে নানান দাবি করে তার সেন্ডেল লাগবে, ঘড়ি লাগবে ইত্যাদি ইত্যাদি..। এ্যামি চাকরীতে যা পেত তা দিয়ে নিজের চলাই কষ্ট, কারণ বেতন ছিল মাত্র আটশত টাকা। এ্যামি উপায়-অন্ত না পেয়ে আর একটি চাকরি খুঁজতে থাকে। ইতিমধ্যে সে নাইট শিপ্টে  কলেজ বিএ ক্লাসে ভর্তি হয়। এ্যামি আর একটি পার্ট-টাইম চাকরি পেল। এ চাকরিটি ছিল একটি বিদেশী ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে বাচ্চাদের গাড়িতে দেখাশোনা করার কাজ। স্কুল ছুটি হয় ২টায়। এ্যামির কাজ ছিল বাচ্চারা গাড়িতে ঠিকমত উঠল কিনা সেটা চেক করা এবং গাড়িতে থেকে প্রতিটি বাচ্চা তাদের বাসায় গাড়ি থেকে নামিয়ে দেওয়া। সব বাচ্চাদের বাসায় বাসায় নামিয়ে হোস্টেলে পৌঁছতে প্রায় পাঁচটা বাজতো। হোস্টেলে গিয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে আবার কলেজে যেত সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে।

এ্যামি নাইট সিপ্টে কলেজে পড়ছে ও দু‘টি চাকরী করছে এরই মধ্যে তার জীবনে এক নতুন অধ্যায় শুরু হলো । তার কর্মস্থলের পাশে আর একটি প্রজেক্টে পার্ট-টাইম হিসাবে কাজ করত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপু নামের একটি ছেলে। মাঝে মধ্যে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তার সাথে এ্যামির দেখা হতো। ছেলেটি খুবই সু-দর্শন, স্মার্ট ও মেধাবী ছিল। অপু ছিল ধর্মে বৌদ্ধ। অপু একদিন একটি অনুষ্ঠানে এ্যামমিকে বন্ধুত্বের প্রস্তাব দেয়। এ্যামি অবাক হয় কারণ ছেলেটির সাথে তার বন্ধুত্বের কথা সে ভাবতে পারে না । একে--তো ভিন্ন কমিউনিটি তার উপর ছেলেটিকে তার  নিজেকে যোগ্য মনে হত না। এ্যামি তাকে বন্ধু হিসেবে না কলিগ হিসেবেই ভবিষ্যতে দেখতে চায় বলে জানায়। তবুও অপু এ্যামির পিছু ছাড়ে না মাঝে মধো ছুটির দিনে সে হোস্টেলে এ্যামির সাথে দেখা করতে যেত। এ্যামি কিছুটা দ্বিধাদ্বন্ধে তার সাথে বন্ধুেত্বর সম্পর্ক চালিয়ে যায়। মাঝে মধ্যে তারা দু’জন ঘুরতে যেত। এবং অপু এ্যামিকে সবসময় তার জীবনে ভাল কাজে উৎসাহ যোগাত। বলতো দেখ এ পৃথিবীতে কীট-পতঙ্গের মত বেঁচে থাকার কোন মানে হয় না। মানুষ চেষ্টা করলে তার জীবনকে অনেক সুন্দরভাবে গড়তে পারে। তোমাকেও তা পারতে হবে। তবে তারা কেউই তাদেরকে ভবিষ্যৎতের জীবনসাথী ভাবতো না। শুধু মাত্র ভাল বন্ধু। এভাবে তাদের বন্ধুত্বের এক বছরের মধ্যেই অপু স্কলারশিপ নিয়ে অস্ট্রেলিয়া চলে যায় পিএইচডি করতে এ্যামিকে না জানিয়ে। এ্যামি খুবই কষ্ট পায়। কারণ অপু তাকে বলে যেতে পারত। কেন না বলে সে অস্ট্রেলিয়া চলে গেল। এবং অস্ট্রেলিয়া গিয়েও সে আর কখনো যোগাযোগ করে নি !\

তৃতীয় অধ্যায়

এরই ই মধ্যে এ্যামি বিএ পাশ করে ও কম্পিউটারের বেশ কিছু প্রয়োজনীয় সফটওয়ারে প্রশিক্ষণ নেয়,  সেসময় এসব সফটওয়ার খুব প্রচলিত ছিল (Word star, Word Perfect, Lotus, Debase, Foxpro )  এবং একটি এনজিওতে চাকরিও পেয়ে যায়।  কিছৃু দিনের মধ্যেই এ্যামির দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়ালো তমাল নামের একটি হিন্দু ছেলে । এ্যামি তমালকে পছন্দ করে না কিন্তু তমাল নাছরবান্দার মতো এ্যামির পিছনে লেগে থাকে। তমাল অবশ্য উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মজীবি । কাজের ফাঁকে ফাঁকে সে সুযোগ পেলেই এ্যামিকে ফোন করতো । মাঝে মধ্যে সুযোগ পেলে সে এ্যামির অফিসের সামনে আসতো তার সাথে দেখা করতে। এভাবে কিছুদিন তাদের বন্ধুত্ব ভালই চলল। কিন্তু হঠাৎ করে.. একদিন তমাল এ্যামিকে কিছু না বলে সে উধাও হল। দু’সপ্তাহ শেষে তমাল ফিরে আসে ঢাকায়। ফিরে এসে সে আর এ্যামির সাথে যোগাযোগ করে না। এ্যামি কিছুটা অস্থিরতার মধ্যে দিন কাটায় ...একদিন সে তমালের অফিসে ফোন করে এবং ফোনটা রিসিভ করে তমালের এক কলিগ সে বলে তমাল সিটে নেই তবে আপনি তার সুখবরের কথা জানেন কী? উত্তরে এ্যামি বলে কই না তো, কিসের সুখবর? উত্তরে তমালের কলিগ বলে ও-- তো-- বিয়ে করেছে!  এ্যামি দ্বিতীয় বার তমালকে ফোন করে এবং তাকে তার সাথে দেখা করতে বলে। 

তমাল এ্যামির সাথে সংসদ ভবনে দেখা করতে আসে। এ্যামি এমনিও তো হতভম্ব। সে তমালকে জিজ্ঞাসা করে আমাকে বলে যেতে পারতে আমাদের সাথে তো বিয়ের কোন কথা ছিল না । আমি তো তোমাকে বাধা দিতাম না। কেন না বলে গেলে? তমাল বলে আমি তো জানতাম না যে আমার জন্য বিয়ে ঠিক করেছে। মা আমাকে ফোন করেছে সে অসুস্থ, আমাকে দেখতে চায় তাই আমি অফিস করে রাতের বাসে বরগুণা চলে গেছি। পৌছে  দেখি তারা আমার বিয়ের আয়োজন করেছে। আমার হাত-পা বাঁধা ছিল আমার-মানে আমি আমার মাকে কষ্ট দিতে চাইনি তাই তাদের সিদ্ধান্তই মেনে নিতে হয়েছে। 

চতুর্থ অধ্যায়

এ্যামির জীবন সাদামাটাভাবে কেটে যায় আরও একটি বছর । সে ব্যস্ত তার এনজিওর চাকরি নিয়ে...সেক্রেটারি টু ইডি এবং অফিস শেষে  কম্পিউটারে  (Foxpro Database Programming)  শেখা নিয়ে । এ্যামি ৫টা পযর্ন্ত অফিস করে চলে যায় ক্লাসে । এবং ক্লাস শেষ করে বাসায় ফিরে রান্না করে খাওয়া, তারপর ঘুম । পরের দিন আবার যথারীতি অফিস ও ক্লাস। এরই মধ্যে তার  ছোট ভাই ও বোন (উইলি ও কনা) তারা দুজ’নই  ঢাকা আসে । ছোট ভাই ইন্টারমিডিয়েড পাশ করেছে  ও বোনটি এসএসসি পাশ করেছে। এখন এ্যামিকে ছোট ভাই ও বোনের দায়-দায়িত¦ সরসরি নিতে হলো। ছোট দুই ভাইবোনের থাকা খাওয়া ও পড়াশুনার খরচ চালাতে তাকে হিমসিম খেতে হয়। এ্যামি তার ভাইবোন দু‘জনকে নিজের কাছে রেখে দুজনকেই অফিস থেকে লোন নিয়ে কলেজে ভর্তি করে দেয়। খুব কষ্টে তার দিন চলে মাস শেষ হতে না হতে তার বেতনের টাকা শেষ হয়ে যেত। অফিসের বস তাকে নিজের মেয়ের মতোই   স্নেহ করতেন এবং এ্যামি কোন সমস্যার কথা জানালে তিনি তা সমাধান করার চেষ্টা করতেন। জীবন এভাবেই হয়তো চলে যেত। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা আরও ভালো কিছু বুঝিবা আয়োজন করে রেখেছিলেন এ্যামির জন্য। হঠাৎ একদিন সকালে অফিসে যাওয়া পথে তার পুরানো কলিগ শাওনকে তার অফিসের রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এ্যামি। এ্যামি রিক্সা থামায়। সে বলে কি ব্যাপার এই সাত সকালে আপনি!!  শাওন বলে, আপনাকে আমার খুব দরকার, চট করে পকেট থেকে একটি বিজনেস কার্ড বের করে এ্যামির হাতে দিয়ে বলে ফোন করবেন প্লিজ। 

এ্যামি কার্ডটি ব্যাগে ঢুকিয়ে রিক্সাকে বলে, চলো। শাওনের কথা একদম ভুলে গেল এ্যামি একদিন অফিসে ইলেকট্রিসিটি নেই সে তার কিছু পরিচিতজনকে ফোন করতে থাকলো সময় কাটানোর জন্য। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ কাউকেই পেল না। হঠাৎ তার ঐ কার্ডটির কথা মনে পড়লো। এ্যামি কৌতূহলি হয়ে কার্ডটি বের করে শাওনকে ফোন করলো।
শাওন বলে প্রতিদিন আপনার ফোনের অপেক্ষা করি... এত দিন দেরি করলেন কেন? এ্যমি বলে, তো এবার বলেন আমাকে আপনার কি দরকার? শাওন বলে আপনার সাথে আমার অনেক কথা আপনি অফিসের পরে আমার সাথে একটু দেখা করতে পারবেন? 

এ্যামি বলে ঠিক আছে আপনি আজ ৫:৩০মি আসাটগেট আড়ংএর সামনে চলে আসেন।
তারা দু’জনে হাজির হলো আড়ংএর সামনে । 

শাওন বলে আসলেন তাহলে... জানেন আমি কতদিন আপনার জন্য অপেক্ষা করেছি...চিঠিতে দেখা করতে বলে। আমি আপনার বাসায় অনেক চিঠি পাঠিয়েছি এবং সেইমত  এসে অপেক্ষা করেছি। পরে বুঝলাম আপনি ঐ বাসায় নেই থাকলে অবশ্যই আসতেন। তারপর থেকে আপনাকে রাস্তায় রাস্তায় খুঁজি..। প্রায় তিনবছর হলো আপনাকে খুঁজে ফিরছি...। আমি জানতাম একদিন না একদিন আপনাকে আমি খুঁজে পাবই। 

যাক, সেকারণে আপনাকে আমি খুজেঁছি তা হলো আপনি আমাদের সংস্থা থেকে চাকরি ছেড়ে যাওয়ার প্রায় ছয় মাস পর থেকে আমি অনুভব করতে শুরু করলাম আপনাকে। এবং আপনাকেই আমার চাই.... । কিন্তু কীভাবে পাব ? অন্য কলিগদের কাছে বহু কষ্টে একটি ঠিকানা যোগার করলাম এবং তারপর থেকে ঐ ঠিকানায় চিঠি দিতাম। 

শাওন বলে প্রতিদিন আপনার ফোনের অপেক্ষা করি... এত দিন দেরি করলেন কেন? এ্যামী বলে, তো এবার বলেন আমাকে আপনার কি দরকার? শাওন বলে আপনার সাথে আমার অনেক কথা আপনি অফিসের পরে আমার সাথে একটু দেখা করতে পারবেন? 

এ্যামি বলে ঠিক আছে আপনি আজ ৫:৩০মি আসাটগেট আড়ংএর সামনে চলে আসেন। তারা দু’জনে হাজির হলো আড়ংএর সামনে । 
শাওন বলে আসলেন তাহলে... জানেন আমি কতদিন আপনার জন্য অপেক্ষা করেছি ...চিঠিতে দেখা করতে বলে। আমি আপনার বাসায় অনেক চিঠি পাঠিয়েছি এবং সেইমত  এসে অপেক্ষা করেছি। পরে বুঝলাম আপনি ঐ বাসায় নেই থাকলে অবশ্যই আসতেন। তারপর থেকে আপনাকে রাস্তায় রাস্তায় খুঁজি..। প্রায় তিনবছর হলো আপনাকে খুঁজে ফিরছি...। আমি জানতাম একদিন না একদিন আপনাকে আমি খুঁজে পাবই। 


যাক, সেকারণে আপনাকে আমি খুজেঁছি তা হলো আপনি আমাদের সংস্থা থেকে চাকরি ছেড়ে যাওয়ার প্রায় ছয় মাস পর থেকে আমি অনুভব করতে শুরু করলাম আপনাকে। এবং আপনাকেই আমার চাই.... । কিন্তু কীভাবে পাব ? অন্য কলিগদের কাছে বহু কষ্টে একটি ঠিকানা যোগার করলাম এবং তারপর থেকে ঐ ঠিকানায় চিঠি দিতাম। 


এ্যামি কিছুটা বিরক্ত ও হতবাক হয়ে শাওনের কথা শুনে সংসদভবনের সামনে সিড়িঁতে বসে। এবং শাওন বলে আমি সত্যিই আপনাকে অনেক ভালবাসি তাই তো রাস্তায় রাস্তায় খুঁজেছি। 
এ্যামির স্বপ্ন ছিল এমন একটি ছেলেকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেতে যার থাকবে প্রধান তিনটি গুণ- যেমন ’তাকে হতে হবে ভালবাসায় পাগল, উচ্চশিক্ষিত, ভদ্র নম্র, সিগারেট বা মদ খাওয়ার অভ্যাস থাকবে পারবে না। সেদিন রাতে বিছানায় শুয়ে এ্যামি তার হিসাব মিলালো। সে আগেই জানতো শাওনের কোন বাজে অভ্যাস নেই। যাইযোক, দু’জনের যোগাযোগ চলল তিন মাস। তারা অফিসের পরে মাঝে মধ্যে ঘুরতে যায় টিএসসি‘তে। শাওন তাকে সরাসরি  প্রস্তাব দেয়। এ্যামি ভাবে শাওন একটি ভদ্র পরিবারের উচ্চ শিক্ষিত ছেলে। ওর বাবা-মা দু’জনই ছিল সাহিত্যিক। শাওনের বাবা বাংলা একাডেমি থেকে ১৯৬০ সালে সাহিত্যে অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিলেন। স্বভাব চরিত্রও ভাল। তবে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় ধর্ম। কারণ শাওন মুসলিম ও এ্যামি খ্রীষ্টান। সুতরাং দু‘পরিবারের গার্ডিয়ানরা কেউ মেনে নিবে না এই বিয়ে! 

এ্যামি শাওনকে সরাসরি বলে তোমাকে আমার বিয়ে করা সম্ভব নয়, কারণ আমি যদি খুব বেশি ধর্মের রীতিনীতি মানি না.. তবে আমার পক্ষে কখনই সম্ভব না নিজের ধর্ম ত্যাগ করে অন্য ধর্ম গ্রহণ করা। ধর্মের ব্যাপারে এ্যামি বরাবরই উদাসীন। তার কাছে বড় ধর্ম হচ্ছে পরিবার প্রতি দায়িত্ব পালন ও নিজের সাধ্য মত অন্যের উপকার করা ----। শাওন কোন অবস্থায় এ্যামির পিছু ছাড়ে না। শাওন এ্যামিকে ছাড়া বাঁচবে না এবং যেকোন অবস্থায় সে এ্যামিকে পেতে চায়।

শাওন বলে আমি যদি তোমার ধর্ম গ্রহণ করি তবে তো কোন সমস্যা নেই। আমি রাজি তুমি তোমার গার্ডিয়ানের কাছে আমাকে নিয়ে চলো। এ্যামি তাকে তার মার কাছে নিয়ে গেল, এ্যামির মার কাছে শাওন তার প্রস্তাব দিল। এ্যামির মা খুব শক্ত ও বুদ্ধিমতি মহিলা সে সব শুনে শাওনকে বলে, বাবা তুমি আমার মেয়েকে পছন্দ কর ভাল কথা। তবে তোমাকে আমার জামাই করতে আমি পারব না, তুমি আমাকে মাফ করে দেও এবং আমার মেয়েকে ভুলে যাও। 


পঞ্চম অধ্যায়

এ্যামি পড়লো মহাসমস্যায় কারণ, এদিকে তার পরিবার, অন্যদিকে শাওন। এ্যামি চেয়েছিল শাওনের মতই একটি ছেলে জীবনসাথী হিসাবে তাঁর কমিউনিটি থেকে। দুঃখের বিষয় এ্যামির কমিউনিটির কোন ছেলেকে তার কখনও পছন্দ হয়নি। এ্যামি তার বসের সাথে ব্যাপারটি জানালো, বললো আপনি শাওনের সাথে কথা বলেন, ওকে আমি আসতে বলি, যদি আপনি গ্রীন সিগন্যাল দেন তবে আমি এ ব্যাপারে সামনে আগুতে পারি। এ্যামির বস বললো ঠিক আছে,  ওকে আসতে বলো, আমি দেখি আলাপ করে। এ্যামি শাওনকে অফিসে ডাকে বসের সাথে দেখা করার জন্য।

পরের দিন বস এ্যামিকে বলে তুমি শাওনকে বিয়ে করতে পার। স্বামী হিসেবে সে ভাল হবে। এ্যামি তবু আরও ভাবে। নিজের ঘনিষ্ঠ দু‘জন বন্ধুর সাথে ব্যাপারটা শেয়ার করে। বন্ধুরাও শাওনের সাথে দেখা করে ও তারাও গ্রীন সিগনাল দেয়। অবশেষে, অনেক ভেবে এ্যামি সিদ্ধান্ত নিল যে, সে শাওনকেই বিয়ে করবে তাতে যাই হোক না কেন... । এ্যামি শাওনকে জানিয়ে দিল তার সিদ্ধান্ত। এ্যামির অফিসের কিছু হাইকোর্টের উকিল কাজ করতো  এ্যামি সিনিয়র উকিল সেলিম সাহেবের সাথে মিক্স ম্যারেজ ব্যাপারে আইনি জটিলতা জানতে চায়। সেলিম সাহেব তাকে  মিক্স ম্যারেজ এর আইন সম্পর্কে অবহিত করে ও পরে এ্যামি ও শাওন দু’জনে সিদ্ধান্ত নেই তারা কোর্ট ম্যারেজ করবে। দিনক্ষণ ধার্য করেন সেলিম সাহেব। বিয়ে হবে এক রেজিস্ট্রার উকিলের বাসায়। ওনার নাম বিকাশ রায়। উনি বাসায় বিয়ে পাড়ান তার লাইসেন্স আছে ম্যারেজ রেজিস্টারের। 

শাওন অফিস থেকে লোন নিয়ে এ্যামিকে নিয়ে নিউ মার্কেটে যায়,  বিয়ের শাড়ি ও আংটি ইত্যাদি কিনতে...। বিয়ের দিন বিকাশ বাবুর বাসায় এ্যামির দু‘জন কলিগ (তারাও উকিল) এবং দু‘জনু বন্ধু উপস্থিত হয়। বিকাশ বাবু বিয়ে পরান Special Marriage Act 1872 সালে ম্যাজ্রে আইন অনুসারে, যাতে কেউ করাও ধর্ম পরিবর্তন না করে । বিয়ের পরে সবাই মিলে চাইনিজ রেস্টুরেন্ট( আসাদগেট মিডনাইট সান)-এ থেতে যায়। খাওয়া শেষে শাওন ও এ্যামি এ্যামির দু‘বান্ধবীসহ বাসায় ফিরে। এদিকে এ্যামি খুব ভয় পাচ্ছিল তার  ছোটভাইকে নিয়ে, যে তার সঙ্গে থাকে। তেজগাঁও কলেজে এমকম ফাইনাল ইয়ারে পরে সে। কোন তুলকালাম কান্ড না ঘটায়। যথারিত তাই ঘটল উইলি বাসায় ফিরে যখন দেখল তার বোন বিয়ে করে জামাই নিয়ে ফিরেছে তার মাথা খারাপ হয়ে গেল। উইলিকে বহু কষ্টে আফসানা ও টুইনকেল থামাল। তবে পরে ভাইটি খুব কেঁদে ছিল। কারণ উইলি তার বোন এ্যামিকে অনেক বেশি ভালবাসে ও শ্রদ্ধা করে মায়ের মত। তার সব চাওয়া-পাওয়া যে তখন পর্যন্ত তার বোন এ্যামির কাছেই ।

ষষ্ট অধ্যায় 

এ্যামির বাবা ঢাকায় আসে বিয়ের এক সপ্তাহের মধ্যেই। বাবা জানাতো না তার  আদরের মেয়েটি একটি ভিন্ন কমিউনিটির ছেলেকে বিয়ে করে ফেলবে। এ্যামি ভয়ে ভয়ে বাবাকে বলে, বাবা এই যে শাওন, তোমার জামাই মানে আমরা বিয়ে করে ফেলেছি। এ্যামি যে ভয় পাচ্ছিল তা কিছুই হলো না, বাবা বললেন ঠিক আছে তুমি যখন বিয়ে করেই ফেলেছো আর কি করার। তবে ভাল হয় জামাই যদি আমার ধর্ম গ্রহণ করে। এ্যামি বলে সে ঠিক আছে পরে দেখা যাবে। তবে বাবা তোমার জামাই খুবই ভাল ছেলে যার কোন পিছু টান নেই। শাওন ছোট ওদের চার ভাইবোনের মধ্যে। বড় ভাই ইংলিসে অর্নাস মাস্টারস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, মেঝ ভাইও অর্নাস মাস্টারস পদার্থ বিদ্যায় ও বোন অর্নাস মাষ্টারস কেমিস্ট্রিতে আর তোমার জামাই অর্নাস মাস্টারস মনোবিজ্ঞানে। ওরা সব ভাইবোনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেছে। বাবা-মা  ছিলেন সাহিত্যিক। শাওন চাকরি করে একটি বেসরকারি সংস্থায়, মিরপুরে। 

বাবাকে এ্যামি ম্যানেজ করতে পারলেও মাকে আর ম্যানেজ করতে পারল না। মা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না, তার মেয়ের এই বিয়ে। এ্যামির সাথে তার মা মোটামুটি এক বছর পর্যন্ত কোনরকম যোগাযোগ রাখেনি। সমস্যা আরো আছে ....এ্যামির পরিবারের মাতুল বংশ মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত ও সুপরিচিত খ্রীষ্টান কমিউনিটিতে। তারা এ ব্যাপারটি ভালভাবে নেয় নি। তারপরও তারা কেউই এব্যাপারে প্রতিবাদও করেনি। এক বছর পরে মোটামুটি সবাই এবং এ্যামির পরিবার মেনে নিলো এ বিয়ে। আর এখন শাওনই হলো এ পরিবারের বেস্ট জামাই। আর  শাওনের পরিবার তো কখনই কোন আপত্তি করেনি এমন কি তারা এ্যামিকে কখনও বলেনি যে এ্যামি, তুমি মুসলিম হও। শাওনের ভাই বোন সবাই এ্যামিকে সাদরেই গ্রহণ করেছে। 

সপ্তম অধ্যায় 

এ্যামির বিয়ের এক বৎসরের মধ্যেই এ্যামি একটি ডোনার সংস্থায় নতুন চাকুরী পেল বেশি বেতনে। দু’ভাইবোনের পড়াশুনা ও নিজেদের খরচ এখন দু’জনের আয়ে ভালই চলছে। উইলি এমকম পাশ করে একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি নিয়েছে। কনা ও ইতিমধ্যে বিএ পাশ করে একটি এনজিওতে চাকরি নিয়েছে। এ্যামির অফিস থেকে সিদ্ধান্ত হলো এ্যামিকে ওয়েব ডিজাইনিংএর উপরে কোর্স করানোর। কারণ অফিসাল ওয়েবসাইটি যা পরবর্তীতে এ্যামিই আপডেট করতে পারে সেক্রেটারিয়াল ও প্রশাসনিক দায়িত্বের পাশাপাশি। এ্যামি সপ্তাহে তিনদিন ওয়েব ডিজাইনিং ক্লাসে যায়। ক্লাসে যাওয়া-আসার জন্য অফিস গাড়ি ও অফিস সময় দুটোই দেয়। এ্যামি ওয়েব ডিজাইনিং শিখে অফিসের ওয়েবসাইটি নিজেই আপডেট করা শুরু করে । এ সংস্থার চার বছর চাকরি শেষে এ্যামি একদিন উইএনডিপি-তে নতুন চাকুরি পেল। UNDP  এর  একটি প্রকল্পে । প্রকল্পটির  নিজেস্ব সংস্থার ওয়েবসাইটি তৈরি করার দায়িত্ব অর্পিত হলো এ্যামির উপর। এ্যামির এই প্রথম কাজ এটি, একাই একটি ওয়েবসাইট নিজে ডেভেলপ করতে হবে। এ্যামি সাহসী। সে কাজ শুরু করলো, এবং সেই প্রথম করা ওয়েবসাইটি হোস্ট করা হলো এবং এটি দু‘বছর পর্যন্ত এ্যামিই আপডেট করেছে। এই ওয়েবসাইটি  প্রশংসিত হয়েছে বিদেশি ওয়েব মাস্টারদের দ্বারাও। এরপর থেকে এ্যামি চাকুরির পাশাপাশি ওয়েব ডিজাইনিংএর কাজ চালিয়ে যায় আর ফ্রিলান্সার হিসেবে ডেভেলপ করেছে অনেক ওয়েবসাইট যেমন এনজিও, ফার্ম, কোম্পানি, ইউএনডিপি,  ইউএসডি-এআইডি প্রকল্প এবং ব্যক্তিগত। 

অষ্টম অধ্যায় 

এ্যামি বিবাহিত জীবনে এর মধ্যেই পাঁচটি বছর দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেছে। এ্যামি বেবি নেয় নি এখনও। সে তার স্বামীকে বোঝায়, এখন যদি আমরা বেবি নিই তবে খরচ তুমি পোষাতে পারবে না। আমার হয়তোবা চাকুরি ছাড়তে হতে পারে। ছোট বোন কনার বিয়ের কথাবার্তা চলছে, শাওনকে এ্যামি বললো দেখ ছোট ভাইবোনের বিয়ে দিয়ে যদি সময় থাকে তবেই শুধু আমি বাচ্চার কথা ভাবতে পারি। আগে আমাকে ওদের বিয়ে দিতে দাও। শাওন খুব ভাল মানুষ সে তার স্ত্রীকে খুবই ভালবাসে ও শ্রদ্ধা করে তাই সে এ্যামির কথা মেনে নেয়। 

একদিন ছোট ভাইবোনের বিয়ে দেওয়াও সম্পন্ন হলো। এবার এ্যামি বলল, শাওন যদি তুমি এখন বেবি নিতে চাও তবে আমার আপত্তি নেই। কিন্তু এর মধ্যে বিয়ের আটটি বছর পেরিয়ে গেল। শাওন বলল, এখন আর বেবি নিয়ে কী লাভ হবে? এই বয়সে আমার মনে হয় না নেওয়াটাই ভাল। কারণ বেশি বয়সে বেশি জটিলতা দেখা দেয়। বেবিটার যদি জন্মগত কোন প্রবলেম থাকে? তারচেয়ে আমরা দু‘জন দু‘জনের সেটাই ভাল। বেবি আর নেওয়া হলো না এ্যামির। এ্যামি ও শাওন দু‘জনে সুখী কাপল। কেউ কোনদিন শোনেনি তাদের ঝগড়া-ঝাটি করতে বা কোন দিন শাওন ছুটির দিনেও একা দুপুরের খাবার খায়নি এ্যামিকে রেখে। ছুটির দিনে এ্যামি ঘরের কাজ গুছিয়ে  রান্না করতে বেশ দেরি হতো দুপুরের খাবার খাওয়ার। শাওন অপেক্ষা করত। কোন কোনদিন তারা ৪টার সময় দুপুরের খাবার খেত একসাথে।

 এরই মধ্যে এ্যামির এক ভাতিজা গ্রামের স্কুলে ভাল রেজাল্ট করলো এসএসসিতে। এ্যামি তাকে ঢাকায় এনে ভর্তি করে দেয় নটডেম কলেজে। ভাতিজা টয় তাদের সাথেই থাকে। এ্যামি এদিকে উইএনডিপির চাকুরি ছেড়ে একটি ইন্টারন্যাশনাল্ এনজিওতে চাকুরি নিল ম্যানেজার প্রশাসন ও হিউম্যান রির্সোস হিসেবে। এখানেও পার্শিয়াল দায়িত্ব হিসেবে ওয়েবসাইটে কাজ করতে হয়। এ সংস্থার হেড (কান্ট্রি ডিরেক্টর) ছিল আমেরিকান। লোকটি অবিবাহিত। বয়স আনুমানিক ৫০ বছর। প্রথম প্রথম তার বস যোশেব এ্যামির দিকে তাকিয়ে কথা বলতো না। এ্যামি একটু অবাক হতো কেন এই লোকটা আমার দিকে না তাকিয়ে কথা বলে! কিন্তু তিন/চার মাস পরে ঘটনা ঘটে তার উল্টো।  সে এখন এ্যামিকে কোন কিছুর জন্য ডাকলে যেন তার চোখের পলক পরে না, এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে, যা এ্যামির অস্বস্থি লাগে। এভাবে চলল কিছুদিন। এরপর একদিন এ্যামি অসুস্থ হয়ে পড়ল ও অফিসে ফোন করে জানিয়ে দিল  সে অফিসে যেতে পারবে না। এ্যামির বস যোশেব যখন শুনলো যে এ্যামি অসুস্থ সে ভীষন অস্থির হয়ে গেল, সে এ্যামিকে কয়েবার ফোন করে অসুস্থার কথা জিজ্ঞেস করে, এসএমএস পাঠায় ও অফিসের অন্য পরিচালকদেরকে বলে তোমরা এ্যামির খোঁজ নাও এ্যামির কি দরকার কেমন আছে ইত্যাদি ইত্যাদি..... 

নবম অধ্যায় 

এ্যামি সুস্থ হওয়ার পর যেদিন প্রথম অফিস গেল সে দিন তার বস যোশেব একটি সেমিনারের সারাদিন অফিসের বাইরে ছিল। এ্যামিকে যখন সে জিজ্ঞাসা করে How is your health condition?  When will you join office ? 

এ্যামি বলে, I am in office now. Will you back office? Jeshop said, yes off-course, I will back office please don’t go home until I am back… এ্যামি বলে, , okay I will wait until you back. Amy said any urgent work? no, not any urgent work just, I want see you....

এ্যামি ব্যাপারটা ভাল লাগেনা । সে ভাবে কেন এই লোকটা আমার প্রতি এত কেয়ারিং ... সে কি চায়? যোশেব সেমিনার শেষে অফিসে ফিরে এ্যামিকে তার রুমে ডাকে  এবং বলে তোমার নিজের যত্ন নিও যদি চাও আরো দু-একদিন ছুটি নিতে পার তাতে তোমার দুর্বলতা কেটে যাবে। এ্যামি বলে না আমি ঠিক  আছি, আমি অফিস করতে পারব আর ছুটির প্রয়োজন হবে না। যোশেব যখন অফিসের কাজে অন্য দেশে যায়, যাওয়া আগের দিন সে এ্যামিকে ডেকে জিজ্ঞাসা করে তোমার জন্য কি আনবো? এ্যামি বলে nothing. I am fine, I don’t need anything. 

যখন সে (Boss) অফিসের কাজে বিভিন্ন মিটিং-এ যায় ওখানে থেকে এসএমএস পাঠায় Hi dear what you are doing now? How are you ? etc. etc.. এ্যামি খুব অসুস্থি বোধ করে কি করবে ভেবে পায় না? তার স্বামীর সাথে ব্যাপারটা শেয়ার করবে? কিন্তু যদি যে মাইন্ড করে! সন্দেহ করে, তবে কি করবে এ্যামি? যোশেব এ্যামিকে কফি খাওয়ার আমন্ত্রণ জানায়, এ্যামি কয়েকবার যোশেবকে ফিরিয়ে দেয়, বলে আমার সপ্তাহে ছুটির দিনে সংসার ম্যানেজ করা  রান্না করা ইত্যাদি আছে। তাছাড়া আমার স্বামী ঘরে থাকে আমরা দু’জনে বিকেলে বেড়াতে যাই। আমার সময় নেই তোমার থাকে কফি খাওয়ার । তাছাড়া আমার স্বামী আমাকে খুব বিশ্বাস করে ও ভীষণ ভালোবাসে । শাওন খুবই ভাল মানুষ ওর কোন খারাপ অভ্যাস নেই আমিই তার সবকিছু আমিই তার ওয়াল্ড... সুতরাং আমি তোমার সাথে কফি খেতে যেতে পারব না। কিন্তু কিছুতেই যেন যোশেব পিছপা হচ্ছে না, সে কিছুদিন পরপরই বলে আমি একা, আমি নিঃসঙ্গ। প্লিজ, চলো আমরা কফি হাউজে যাই সেটা তো তোমার আপত্তি নেই। এ্যামি বেশ চিন্তায় পরে যায় সে কি করবে ভয় পাচ্ছে যদি অন্য কেউ দেখে ফেলে তবে কি হবে? তারপর একদিন অফিসের পরে কফি খেতে যেতে রাজি হয়। 

যোশেব খুবই খুশি এত খুশি কখনও এ্যামি তাকে দেখেনি। কফি খেতে খেতে যোশেব বলে  know you are married. You have nice husband. BUT really I like you very much, I don’t know why? You are really very pretty  তোমাকে যতই দেখি আমি মুগ্ধ হই আমার ভীষণ ভাল লাগে তুমি আমার আশে পাশে থাকলে.. জানিনা কেন এমন হয় !!! এ্যামির অস্থির লাগে সে কি করবে ভেবে পায় না। এরই মধ্যে তারও যোশেবকে একটু একটু ভাল লাগতে শুরু হয়েছে। যোশেবের এসএমএস পেলে সে খুশি হয় বা ফোন পেলেও খুশি হয় কেমন যেন একটা অদ্ভুত টান অনুভব করছে এ্যামি। কিন্তু সেটা সে কারও সাথে শেয়ার করতে পারছে না । এ্যামির দশ বছরের সুখী বিবাহিত জীবনে অস্থিরতা চলে আসে। কেমন যেন একটা অস্থিরতা কাজ করে সারাক্ষণ। ব্যাপারটা বুঝতে পারে কিছু একটা হচ্ছে এ্যামির এবং সেটা আমার কাছে লুকাচ্ছে। শাওন খুব চালাকও বটে, সে কোন ভাবে এ্যামির অসচেতনার সুযোগ নিয়ে এ্যামির ইমেল ইনবক্সে ঢুকে এবং সেখানে সে কিছু ক্লু পায়(ইমেইল) যা এ্যামির ইদানিং কালের অস্থিরতার কারণ। 


শাওন পরের দিন রাতে এ্যামিকে জিজ্ঞাসা করে, তোমার বস এর সাথে তোমার কি কোন সম্পর্ক আছে? এ্যামি খুব অবাক দৃষ্টিতে তাকায় এবং বলে তুমি বুঝলে কিভাবে? শাওন বলে, আমি কিছুদিন ধরে লক্ষ্য করছি তোমার মধ্যে একটি অজানা ভয় ও অস্থিরতা কাজ করছে।  আমি বুঝতে পারি,  কেন পারব না ...আমি যে মনোবিজ্ঞানের ছাত্র। এ্যামি সব খুলে বলে শাওনকে । শাওন সব শুনে বলে তোমার ব্যাপার তুমি কতটুকু সম্পর্ক রাখবে তার সাথে তবে, নিশ্চয় আমাকে ধোঁকা দিবে না। তুমি জান আমি তোমাকে কতটা ভালবাসি ও তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচবো না। আমাদের এতদিনের বিবাহিত জীবনে তোমার জন্য আমার ভালবাসা এতটুকু কমেনি বরং বেড়েছে। আমাদের সন্তান নেই তাতে কী, তুমিই আমার সব কিছু। যদিও টয় আমাদের সাথে আছে সন্তানের মতই। এবং এরইমধ্যে বিবিএ পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ‘তে ভর্তি হয়েছে। টয় এর সাথে শাওনের খুব ভাল সম্পর্ক বাবার মত ¯েœহ করে সে টয়কে। 

দেখতে দেখতে দু‘বছর পেরিয়ে গেল।  হাজার চেষ্টা করেও যখন যোশেব দেখল এ্যামিকে সে পাবে না, সে তখন সিদ্ধান্ত নিল বাংলাদেশ ছেড়ে অন্য দেশে চাকরি নেওয়ার। যোশেব নেপালে চাকুরি নিয়ে বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যায় । এ্যামির যদিও কিছুটা খারাপ লেগেছিল কিন্তু সে আবার খুশিও হয়েছিল, যে এবার আমাকে যোশেব আর বিরক্ত করবে না। নেপালে গিয়ে যোশেব আর তেমন একটা যোগাযোগ করেনি এ্যামির সাথে। এ্যামি ফিরে এলো, তাদের সম্পর্ক আগে যেমন ছিল তেমনই হয়ে গেল। তৃতীয় ব্যক্তির আর অস্থিত্ব থাকল না। এ্যামি ও শাওন দু’জনের আবার স্বাভাবিক জীবন ফিরে এলো।  


আরো আসচ্ছে.............

পাঠকের মন্তব্য


আলো : Excellent !

একই ধরনের লেখা, আপনার পছন্দ হতে পারে

bdjogajog