বিলাসী খাদ্যবস্তুগুলোর মধ্যে চকলেট অন্যতম। আমরা তৃপ্তি, উদ্যম ও ইচ্ছাশক্তি বাড়াতে এ চকলেট খাবার জন্য লোলুপ হয়ে থাকি। চকলেট আমাদের কাছে এতখানি প্রিয় বস্তু যে, বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের প্রিয়জন এবং মনের মানুষকে স্বাগত বা বিদায় জানাবার সময় চকলেট উপহার দিতে আমরা খুব পছন্দ করি। অবশ্য বিশেষজ্ঞরা বর্তমানে বলছেন যে, চকলেটের থেরাপিউটিক গুণ বা রোগ নিরাময় করার ক্ষমতাও রয়েছে।
সম্প্রতি কিছু চকলেটপ্রেমী আরোগ্যলাভ করেছেনকতিপয় শারীরিক অসুবিধা থেকে। এক্ষেত্রে চকলেট তারা গ্রহণ করেছিলেন ‘চকোমাইসিন’ নামের সুইট পিল। যেকোন থেরাপির উদ্দেশ্য হচ্ছে, ‘মন-দেহ-আত্নার অখণ্ডতাকে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী অবস্থাকে সারিয়ে তোলা এবং চেতনাকে তীক্ষ্ন করা। আর সে অনুঘটক যদি চকলেট হয়, তা’হলে তো আরোগ্য লাভ হবে আরও সুন্দরভাবে।
চকলেটের উপকারিতা
চকলেটে রয়েছে ফেনাইল থাইলামাইন। গবেষণায় দেখা যায় যে, আমাদের দেহ-মনে তীব্রমাত্রার আনন্দানুভুতি উৎপাদন করে। বাস্তবিক পক্ষে চকলেট হচ্ছে প্রাকৃতিক নির্যাস, একটি চমৎতার প্রাকৃতিক উপশমকারী বা অ্যান্টি ডিপ্রেসান্ট এ চকলেটের মধ্যে রয়েছে থিওব্রোমাইন নামক অ্যালক্যালয়েড, যা কিডনিকে উদ্দীপিত করে মৃদু মূত্রনাশক ওষুধ হিসেবে। ক্যাফেইন এর মতো চকলেট ও কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে উদ্দীপিত করে মৃদু মূত্রনাশক ওষুধ হিসেবে।। ক্যাফেইন এর মতো চকলেটও কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে উদ্দীপিত করতে সক্ষম।
কোকো চিকিৎসা
চকলেট থেরাপির দুটি সুনির্দিষ্ট দিক রয়েছে। প্রথমত, বাস্তবিক পক্ষেই চকলেট খাওয়া আমরা উপভোগ করি। চকলেটের কথা ভাবলে আমরা আনন্দ এবং অকৃত্রিম প্রশান্তি লাভ করি। থেরাপি আবশ্যিকভাবে কেবলমাত্র একজন কাউন্সিলারের নিরানন্দ থেরাপি সেশনেই সীমাদ্ধ থাকে না। আমরা প্রায় সবাই জীবনের প্রবাহমানতার ক্ষেত্রে নির্মলতার চাহিদা অনুভব ও অনুসন্ধান করে থাকি। থেরাপি এক্ষেত্রে একটি ক্রমসঞ্চরমান কার্যাবলীতে পরিণত হতে পারে। অর্থাৎ যা করতে আমাদের ভালোলাগে, যা আমরা উপভোগ করতে পারি বা যা করে আমরা আনন্দ পাই এবং প্রশান্তি আসে দেহ-মনে তাই সার্থক আরোগ্য লাভের উপায় বা ক্ষেত্রেই এ থেরাপির সার্থকতা নিহীত থাকে। চকলেট বানানোরও হচ্ছে একটি আনন্দ উৎপাদক প্রক্রিয়া এবং কিছুটা হলেও ভোগসুখবাদি অনুশীলন বা আত্ন-অনুসন্ধানের দিকে মানুষকে ধাবিত করে। এক্ষেত্রে অনুপ্রেরণামূলক উদাহরণ হচ্ছে ‘চকলেট’ এবং ওয়াটার ফর চকলেট নামক ফ্লিম দুটি- যা থেকে বোঝা যায় চকলেট কিভাবে মানুষকে আত্ন-সচেতনতার দিকে ধাবিত করে।
চকলেট সংশ্লিষ্ট স্বপ্ন (চকলেট ও স্বপ্ন)
পেশাদার থেরাপিস্ট নীতা গার্গ চকলেট সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেন, ‘আমাদের হাতের কাজের সঙ্গে, অনুভূতির সঙ্গে সৃজনশীলতা এবং ছাঁচে ফেলে সাজানোর ক্ষেত্রে মানুষের মধ্যে ভালো থাকার অনুভূতির সৃষ্টি হয়। চকলেট তৈরির প্রক্রিয়াটি খুব সহজ। এক্ষেত্রে সহজ কিছু ধাপ আপনাকে অনুসরণ করতে হবে, যেমন, ‘চকলেট গলানো, মিশ্রণ এবং চকলেটের সেন্টারসমূহের নির্বাচন যথাযথভাবে করতে হবে এবং চূড়ান্তপর্বে আকর্ষণীয়ভাবে চকলেট প্যাকেট করা। সম্পূর্র্ণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সমন্বয়সাধন করে স্পর্শ, স্বাদ এবং গন্ধ।
এক দশকব্যাপী চকলেট বানানোর শিক্ষণপ্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অঞ্জলী চোপড়া বলেন, ‘এটি আমাকে ভীষণ আনন্দ দেয়, যখন আমি দেখতে পাই যে, আমার ছেলেরা সৃজনশীল ও উৎপাদনমুখী হয়ে উঠেছে এবং সেসঙ্গে নিজেদের মধ্যে ব্যাপারটি উপভোগও করছে। অঞ্জলীর ওয়ার্কশপের দু‘জন ছাত্রী প্রিয়া এবং নচিকেতা একই সুরে বলেন, যে, চকলেট গলানো, ঢালা এবং চকলেটের মাঝখানে সেটিংগুলো বসানো খুবই রোমাঞ্চকর ব্যাপার। আমাদের ভীষণ ভালোলাগে এটি ভেবে যে, আমাদের নিজ হাতে আমাদের প্রিয়জনের জন্য কিছু বানাচ্ছি।
সোনালী বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে চকলেট প্রস্তুত করছেন। সোনালীর স্বামী চাকরিসূত্রে তার কাছ থেকে বহু দূরে অবস্থান করায় সোনালী বিষন্নতা বোধ করছেন। কিন্তু অঞ্জলী চোপড়ার ক্লাসে অংশগ্রহণের মাধ্যমে তার নেতিবাচক চিন্তা ও বিষন্নতা দূরীভূত হয়েছে। এখন তিনি চকলেট বানানোকে এমন একটি কাজ হিসেবে দেখছেন যা করতে তার ভালোলাগে এবং এমন কিছু যা থেকে তিনি আয়ও করতে পারবেন। চকলেট থেরাপির সরণী মৃদুলার কথা হচ্ছে, একে আপনার বন্ধুতে পরিণত করুন, তা‘হলে জীবনে সমৃদ্ধির একটি আনন্দময় অনুভূতি লাভ করতে সক্ষম হবেন। আর এর সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকবে আপনার স্পর্র্শ ,স্বাদ, গন্ধ এবং সৃজনশীল অনুভূতি।
চকলেট সম্পর্কিত অনুসন্ধান
ম্যারে ল্যাংগহাম হচ্ছেন; ‘চকলেট থেরাপি বইয়ের লেখক। তিনি একটি চমৎতার কথা বলেছেন, তার মতে, যে আকৃতির চকলেট আমরা পছন্দ করি বা বেছে নেই খাবার জন্য তা আমাদের ব্যক্তিত্ব গঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে। যেমন মানসিকভাবে উদ্বিগ্ন ব্যক্তিরা পছন্দ করে বর্গাকৃতি চকলেট। যে ব্যক্তি হলুদ কেন্দ্রবিশিষ্ট চকলেট পছন্দ করে তারা সেবার মনোভাব সম্পন্ন হয় ও মুক্তমনের অধিকারী হয়। যেসব ব্যক্তি স্ট্রবেরি স্বাদের চকলেট পছন্দ করে তারা সেবার মনোভাব সম্পন্ন হয় ও মুক্তমনের অধিকারী হয়। যেসব ব্যক্তি স্ট্রবেরি স্বাদের চকলেট পছন্দ করে তাদের মধ্যে একটা অভাববোধ বিরাজ করে। আবার যেসব ব্যক্তি পিঙ্গল বর্ণের বাদাম দেওয়া চকলেট পছন্দ করে তারা যেন প্রকৃতির সঙ্গে ঐক্যতানে বাধা থাকে।
চকলেট সম্পর্কিত মিথ
চকলেট খাওয়া আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কথাটির ভিত্তি হচ্ছে মূলত অতিরিক্ত চিনি এবং সংযোজিত ভেজিটেবল ফ্যাট দিয়ে বানানো নিম্নমানের চকলেট আজকাল বাজারে পাওয়া যায়। মানসম্পন্ন চকলেটে থাকে বিশুদ্ধ কোকো বাটার এবং এতে কোন প্রকার সংযোজিত ভেজিটেবল ফ্যাট দেওয়া হয় না। উচ্চ মাত্রার কোকো সলিডড যেমন এতে থাকে না তেমনি চিনির পরিমাণও থাকে খুব কম। এবার আসুন জেনে নেওয়া যাক মানসম্পন্ন চকলেট কেন আপনার জন্য ক্ষতিকর নয়।
স্থুলতা
মানসম্পন্ন চকলেটে স্থুলতার কোন প্রবণতা থাকে না। কারণ এর উপাদানে নিম্নমানের চকলেটের চেয়ে চিনির পরিমাণ কম থাকে।
ব্রণ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পরিচালিতি একটি জরিপ থেকে দেখা যায় যে, যুবক-যুবতীদের মধ্যে চকলেট খাবার সঙ্গে ব্রণ হবার কোন সম্পর্ক নেই। আসলে এর কারণ হচ্ছে হরমোনগত সমন্বয়ের অভাব এবং দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় ফল ও শাকসবজির অভাব।
দাঁতের ক্ষয়
চকলেট আপনার মুখের ভেতরেই গলে যাবার কারণে এটি অপেক্ষাকৃত কম সময় আপনার দাঁতের উপর ক্রিয়াশীল থাকে। অবশ্য চকলেটে যে চিনি যুক্ত থাকে সেটি দাঁতের ক্ষয়ে কিছুটা অবদান রাখলেও এর ঝুঁকির পরিমাণ মুখের ভিতর অধিক সময় থাকা আঠালো ধরনের মিষ্টির চেয়ে অনেক কম হয়।