টুনকি গেল কোনখানে
(শিশু-কিশোর গল্পকাহিনী)
টুনকিকে তোমরা সবাই চেন। সেই যে মায়ের ওপর অভিমান করে খাবার খুঁজতে বেরিয়ে কোনো খাবার না পেয়ে কাঁদতে কাঁদতে মায়ের কাছে ফিরে এসেছিল। খাবার নিয়ে আর বায়না ধরেনি কোনোদিন। কিন্তু তার দৌরাত্মি বেড়েছে বৈ কমেনি এক ফোঁটা।
এইতো বুড়ো কচ্ছপ দাদুর সঙ্গে বাজি ধরে কী নাকালটাই না হল।সন্ধ্যাবেলা কাচুমাচু মুখে যখন বাড়ি ফিরে এল, মায়ের কাছে বকুনি তাকে খেতে হয়নি তেমন, কিন্তু সেদিন থেকে মা তাকে কড়া নজর রেখেছেন। কোথা্ও যাবার উপায় নেই।
ঘরে বসে থেকে থেকে টুনকির মন হাঁফিয়ে উঠলো। বনে-বনে কত ফল ধরেছে। নিত্য নতুন মজার কাণ্ড ঘটছে, টুনকি তার কিছুই জানতে পারলো না।
সেদিন ছিল গ্রীষ্মের দুপুর। রোদের তাপে সাড়া দুনিয়া পুড়ছে। খাওয়া-দাওয়া সেরে টুনকির মা তাকে নিয়ে তাদের নিরালা ছায়াঢাকা ঘরে শুয়ে পড়ল। একটু পরে মা ঘুমিয়ে পড়ল, টুনকির পোড়া চোখে আর ঘুম আসে? মাকে ঘুমুতে দেখে সে উঠে পড়ল।
পা টিপে টিপে বাইরে এসে তারপর দে-ছুট। টুনকি প্রাণপণে ছুটছে, কোনোদিকে খেয়াল নেই, যদি মা উঠে পড়ে পিছু ডাকে।দৌঁড়ুতে দৌঁড়ুতে গভীর বনে এসে টুনকি হাঁফাতে লাগলো। চারদিকে চেয়ে দেখে-ওমা!এ কোথায় এসেছে, সবই যে অচেনা! টুনকির মনে তখন ভয় হল। মা কাছে নেই। মা বলেছেন, গভীর বনে বিপদ-আপদের ভয় আছে।
টুনকি তাই ভয়ে- ভয়ে এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে ভাবছে, কি করে, কোথায় যায়। অমনি পেছনে খসখস আওয়াজ শুনে ফিরে তাকালো, দেখে, মিঃ ও মিসেস শেয়ালপণ্ডিত আসছে। টুনকি বুঝতে পারলো তারা বেড়াতে বেরিয়েছে।
তখন বিকেল হয়ে এসেছে। রোদের ঝাঁজ আর নেই। বনের বুকে আবছা আঁধার ঘনিয়ে আসছে। মিঃ ও মিসেস শেয়াল পাশ কাটিয়ে চলে গেল।টুনকিও তাদের পিছু পিছু রওয়া হল। খানিক দূর গিয়ে দেখা হল মিঃ ও মিসেস টাইগারের সঙ্গে।তারাও সাজ-গোজ করে বৈকালিক ভ্রমণে বেরিয়েছে।
টুনকিও গুটিগুটি তাদের সঙ্গে চলতে লাগলো। তার ভয়-ডর তখন চলে গেছে। ভাবসাব এমন হয়েছে যেন, সেও তাদের মতো। যেতে যেতে আরো কতজনের সঙ্গে দেখা হল। মি: ও মিসেস সিনহা। মি: ও মিসেস মান্কি, মি: ও মিসেস ক্যাঙারু, মি: ও মিসেস এলিফ্যান্ট। আরো কতজন। টৃনকির মনে ভারি ফুর্তি। ভাবছে এরা সবাই যাচ্ছে কোথায়, নিশ্চয়ই একটা মজা হবে।
খানিকপরে তারা একটা রেস্টুরেন্টে এসে পৌঁছল। সাইনবোর্ডের দিকে তাকিয়ে টুনকি দেখতে পেল লেখা রয়েছে ‘ভালুকা রেস্টুরেন্ট’।
এতক্ষণে টুনকি বুঝতে পারল সে ভালুক মামার বনে এসেছে। অনেকদিন আগে মায়ের সঙ্গে একবার এসেছিল। তখন টুনকি ছোট ছিল। ভালুক মামার রেস্টুরেন্ট তখনো হয় নি। ছোট একটি চায়ের দোকার ছিল। তখন টফি লজেন্স পাওয়া যেত, মা দোকান থেকে টুকিটাকি জিনিস কিনে দিলেন। ভালুক মামা আদর করে টুনকিকে ঠফি লজেন্স খেতে দিয়েছিলেন।বলেছিলেন, টুনকিবাবু মাঝে মাঝে মায়ের সঙ্গে বেড়াতে এসো, কেমন? টুনকি ঘাড় নেড়ে বলেছিল- আসব ভালুক মামা। আসা আর হয়নি। আজকে কেমন করে যে হল টুনকি নিজেই ভেবে পায় না। ভালুক মামার বন যে কোনদিকে তাও টুনকির জানা ছিল না। কতদিন মাকে বলেছে, মা টুনকির কথায় কানেই দেননি। এখন মা শুনে অবাক হয়ে যাবেন যে টুনকি ভালুক মামার বনে এসেছে। কেউ তাকে পথে দেখিয়ে দেয়নি। সে নিজেই এসেছে। মায়ের কাছে শুনেছে ভালুক মামার বন কত দূরে, আর কত গভীরে। সেখানে সেখানে ছোট ছেলেদের যেতে নেই।বিপদ-আপদের ভয় আছে। মায়ের কথা শুনে একা এসেছে ভেবে টুনকির মনটা একটু খারাপ হল।
রেডিওতে তখন একটা নাচের বাজনা বাজছিল। টুনকির মন তাই আনন্দে নেচে উঠল। ভালুক মামার রেস্টুরেন্টের সামনে দাঁড়িয়ে সে তালে তালে নাচ জুড়ে দিল। মা তো জানেন না, এখানে কত মজা। নাচতে নাচতে টুনকি হাঁফিয়ে পড়ল, মনে হল গলাটা শুকিয়ে গেছে, একটু পানি খাওয়া যাক, ভালুকা রেস্টুরেন্ট থেকে।ভেবে যেই একটু এগিয়েছে অমনি দেখে ওমা। রেস্টুরেন্টের সামনে সুন্দন একটা লন, তাতে টেবিল চেয়ার পাতা। টেবিল ভর্তি হরেক রকম। মি: ও মিসেসরা খেতে বসেছেন। বয়-ভালুকরা তাদের পরিবেশন করছে।টুনকিরও ভারি ইচ্ছা হল রেস্টুরেন্টে খেতে, কিন্তু কী করে খাবে, সে তো পয়সা আনে নি।টুনকি তখন ভাবল ভালুক মামার সঙ্গে দেখা করে একটু পানি খেতে চাইবে। ভালুক মামা আর কিছু না হোক, টফি লজেন্স তো খেতে দেবে।
টুনকি এদিক- ওদিক তাকিয়ে আস্তে আস্তে রেস্টুরেন্টে ঢুকে পড়ল।দেখে সামনের চেয়ারে ভালুক মামা বসে আছেন। মাথার উপর ফুল স্পিডে সিলিং ফ্যান ঘুরছে। তাও ভালুক মামা গরমের চোটে ভীষণ হাঁপাচ্ছেন।
টুনকি সরাসরি গিয়ে ভালুক মামার সামনে দাঁড়ালো।ভালুক মামা কেমন উদাস উদাস চোখে তাকিয়ে আছেন দেখে ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেল, তবে কি ভালুক মামা চিনতে পারেন নি তাকে? কিন্তু টুনকি অত সহজে দমবার মাত্র নয়। সে গলায় জোর দিয়ে ডাকল- ভালুক মামা! ভালুক মামা!
ভালুক মামা বিরক্ত কণ্ঠে বললেন, কেরে তুই, ভালুক মামা, ভালুক মামা করছিস?
টুনকি বললো চিনতে পারছেন না ভালুক মামা, আমি টুনকি।
টুনকি! আয় তো কাছে, দেখি ভালো করে। বাহ বেশ বড় হয়েছিস তো? তোকে একা দেখছি কেন রে, মা কোথায়?
টুনকি বলে, আমি একা এসেছি ভালুক মামা।
একা এসছিস বলিস কী রে!ভালুক মামার চোখ কপালে ওঠে।– পথ চিনলি কী করে, মা ছেড়ে দিল তোকে?
টুনকির ভারি অভিমান হয়, ভালুক মামা ভাবছে কী! সেকি এখনও ছোটটি আছে? কিন্তু তাতো আর ভালুক মামাকে বলা যায় না।
টুনকি শুধু বলে ভালুক মামা আমি একাই এসেছি।
একাই এসেছিস!বেশ বেশ! টুনকি আমাদের তাহলে বড় হয়েছে। তা খাবি কী রে বল! ঘুরে ঘুরে দেখ কী খেতে ইচ্ছা করে- ভালুক মামা দরাজ গলায় বললেন।
তারপর ভালুক মামা টুনকিকে সঙ্গে নিয়ে চললেন সামনে লনের দিকে। খাবার টেবিলের কাছে এসে বললেন, কী খাবি বল দেখি!
টুনকি আর কি বলে, সে অতটুকুন ছোট ছেলে টেবিলের সব খাবার দেখতে পাচ্ছে না। ব্যাপার বুঝতে পেরে ভালুক মামা তাকে তুলে টেবিলে বসিয়ে দিলেন। টেবিলে বসে বিরাট বিরাট মুখগুলোর সামনে পড়ে, কাটা চামচের টুংটাং শব্দে ও খাবারের ঘ্রাণে, ভালুব বয়দের কৌতূহলী দৃষ্টির সামনে পড়ে টুনকির কেমন মাথা ঘুরতে লাগলো।
ভালুক মামা আবার বললেন, কীরে টুনকি, কী খাবি বল না।
টুনকি বলল, মামা ঐ রঙিন পানির বোতলে ওগুলো কী? তাও জানিস না; ওগুলো ভালুককোলা, বাঘাকোলা, সিঙ্গিকোলা- কত কী!
তুই কী খাবি বল? টুনকি ফস করে বলে বসল- আমি খাব সিঙ্গিকোলা।
ভালুক মামা হো হো করে হেসে উঠলেন- বললেন, সিঙ্গিকোলাই পছন্দ হল; সাবধানে খাবি বাপু, ওটাতে যা ঝাঁজ।
মামা বয়কে ইঙ্গিত করলেন টুনকিকে একটা সিঙ্গিকোলা দিতে। বয় সিপি খুলে এক বোতল সিঙ্গিকোলা টুনকির হাতে এনে দিল। টুনকি হাত বাড়িয়ে নিল-আহঃ, কী আরাম! কেমন ঠাণ্ডা, রঙটা কী সুন্দর।এক চুমুক খেতেই ঝাঁজে মুখ ভর্তি হয়ে গেল।
ঝাঁজ হলে কী হবে, কী মিস্টি খেতে।মা যদি এসময় সঙ্গে থাকতো। তখন সবে মাত্র খাওয়া শুরু হয়েছে। মি: ও মিসেস সিনহা ঈগলের রোষ্টটাকে কাবু করতে ব্যস্ত, মি: ও মিসেস টাইগার গরুর গোস্তের কাটলেটের উপর হুমরি খেয়ে পড়েছে। মি: ও মিসেস শেয়াল বন-মোরগের কাবাবটাকে বাগিয়ে এনেছে।নিরামিশভোজী মি: ও মিসেস এলি্ফ্যান্ট ভেজিটেবল চপে মনোনিবেশ করছে।ফলাহারী মি: ও মিসেস মান্কি রকমারি ফলের পুডিং ও আইসক্রিম নিয়ে ব্যস্ত। এমনি মূহুর্তে টুনকি মার কথা মনে ভাবতে ভাবতে সিঙ্গিকোলার বোতলটা ধরে ঢকঢক করে সিঙ্গিকোলা পান করে চলেছে। বোতলটা প্রায় শেষ হয়ে এল আর কী!কী এ কী!হঠাৎ বিষম খেয়ে ফেলল। তার নাক মুখ দিয়ে সিঙ্গি উঠে গেল।টুনকির মনে হল তার নাক-মুখ জ্বলে যাচ্ছে, নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে।কিছু বোঝার আগেই টুনকিকে কে যেন শূন্যে ছুড়ে দিল।
বোতলটা ছিঁটকে গিয়ে পড়বিতো পড় একেবারে মিসেস সিনহার কোলে।তার নাইলনের শাড়িটা সিঙ্গির রসে সপসপে।কাণ্ড দেখে ভদ্র মহিলা উঠল লাফিয়ে।তার ধাক্কা লেগে মিঃ সিনহা কাত হয়ে পড়লো মিঃ এলিফ্যান্টের গায়ে।সে নিজেকে সামলাতে গিয়ে ডাইনিং টেবিল দিল উল্টে। টেবিলের চাপে পড়ে মিঃ ও মিসেস টাইগার, মিঃ ও মিসেস শেয়াল কেউ পড়ে হুমড়ি খেয়ে, কেউবা পড়ল গড়িয়ে।ভালুক মামার এতো সাধের রেস্টুরেন্টের বোতল গ্লাস, পেয়ালা,পিরিচ, কাচের বাসন-কোসন ভেঙে তছনছ।ভালুক মামা হতভম্ব।শুধু কী তাই, টেবিলের চাপ পড়ে তার গোদা পা যায় আর কী! ভাগ্যিস মোটা শরীর নিয়ে সে হাঁফাতে-হাঁফাতে সরে এসেছিল। ভালুক মামার সব রাগ গিয়ে পড়লো টুনকির ওপর, ছোঁড়াটাই অলুক্ষণে। হায়-হায়! টুনকির জন্যে তার রেস্টুরেন্টের এই দশা!
টৃনকির ওপর ভালুক মামার যতই রাগ থাকুক না কেনো, টুনকির কিন্তু কোন হদিস পাওয়া গেল না্।ভালুক বয়রা অতিথিদের নিয়ে ব্যস্ত, কেউ ছুটলো ডাক্তার আনতে।সকলেই কিছু না কিছু আহত হয়েছে, তাদের প্রাথমিক চিকিৎসার প্রয়োজন।
টুনকি বেচারা সিঙ্গিকোলার ঝাঁজ সইতে না পেরে ঘুরপাক খেতে খেতে গিয়ে ছিঁটকে পড়ল ভালুকা রেস্টুরেন্টের অদূরে ঘাসের ঝোপে।সেখানে আবার হুলুস্থুল কাণ্ড। নেতা নির্বাচন নিয়ে পিঁপড়েদের এক বিরাট মিটিং। টুনকি ঝড় বইয়ে উড়ে গিয়ে পড়ল তাদের মধ্যে। ঝড়ে তোর তোরে কত পিঁপড়ে লিডার উড়ে গিয়ে পড়ল দূরে বসেছিল আসন জাঁকিয়ে, তারা গেল একবারে থেঁতলে। হায় হায় সোর উঠলেই বা কী, টুনকির কি তখন হুঁশ আছে! সে বেচারা ভিমরি খেয়ে পড়ে আছে তো পড়েই আছে।
অনেকক্ষণ পরে টুনকির জ্ঞান ফিরে এল।কী যেন কামরাচ্ছে কুটুস-কুটুস। কামড়ালেই—বা কী!টুনকির কি নড়বার ক্ষমতা আছে। অসার হয়ে পড়ে কামড় খেতেই লাগল।
আসলে হয়েছে কী, টুনকির বিরাট দেহের চাপে হাজার হাজার পিঁপড়েরা মিটিং ভঙ্গ করে দিয়ে পালাল। কিন্তু সারা পিঁপড়ে রাজ্যে রটে গেল, অন্য গ্রহের একটা প্রাণী এসে পড়েছে পিঁপড়ের রাজ্যে।যেমন বিরাট তার দেহ তেমনি কিম্ভুৎকিমাকার তার চেহারা। অমনি সারা পিঁপড়ে রাজ্য সরগরম হয়ে উঠল। সাংবাদিকরা ফলাও করে খবরের কাগজে ছাপার জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠল সেই সংবাদ।বৈজ্ঞানিকরা নতুন গবেষণার সন্ধান পেয়ে মেতে উঠল।শুধু কি তাই। যারা অতি উৎসাহী, তারা বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি নিয়ে নির্দিষ্টস্থানে এসে পৌঁছাল।পুলিশ অফিসাররা দুর্ঘটনার সংবাদ পেয়ে সরেজমিনে তদন্ত করতে এল।
এখন টুনকির অবস্থাখানা ভাবুন একবার! বৈজ্ঞানিকদের যন্ত্রপাতির খোঁচায়, পুলিশি জুলুমের জ্বালায় টুনকির প্রাণ যায় আর কী?
সন্ধ্যার ঝিরঝিরে বাতাসে মাথা একটু ঠাণ্ডা হয়ে এল। কাটুস-কুটুসগুলোর জ্বালা সইতে না পেরে টুনকি এবার উঠে বসল। নাঃ, ঠাণ্ডা বাতা্সে বে-শ ভাল লাগছে শরীরটা, যেন জুড়িয়ে যাচ্ছে। মাথাটাও ঠাণ্ডা হয়ে এল সিঙ্গিকোলার মতো। এবার টুনকি উঠে দাঁড়ালো। কাটুস-কুটুস যে আর সহ্র হয় না। এখান থেকে পালাতে হবে।যেমনি ভাবা তেমনি কাজ, টুনকি দিল তো দৌড়। পিঁপড়ে- পুলিশ আর বিজ্ঞানিদের অবস্থা কাহিল, তারা টুকুস-টাকুস পড়তে থাকলো ঘাসের উপর। টুনকিকে আর পায় কে, দৌড়াচ্ছে হাওয়ার বেগে। ভালুক মামার হাতে পড়লে কি আর রক্ষা আছে? ভা্বতেই টুনকির গা কাঁটা দিয়ে উঠলো।
ছুটতে ছুটতে টুনকি যখন ভালুক মামার বন পেরিয়ে এল,তখন যেন ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ল। আরাম করে এবার হাঁটতে লাগলো। মায়ের কথাই এখন বেশি করে মনে পড়ছে। মা হয়তো ভাবছেন, ‘টুনকি গেল কোনখানে’।