দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ
রহস্য ঘনিয়ে এলো (দ্বিতীয় পর্ব)
সামনে গোরস্থানের পথ শেষ হয়ে গেলো। পিপ গিয়ে পড়লো বড় গাছটার গুঁড়ির কাছাকাছি। এ পাশ থেকে সে দেখলো, লোকটা ঝিমুচ্ছে। কে জানে লোকটার শীতই লাগছে বোধ হয়।
মনে মনে ভাবলো সে, এই বোধ হয় এই জোয়ানমদ্দ রাক্ষসটা! বাব্বা, ওর কাছে গিয়ে কাজ নেই আমার। দেখতে পেলে খেয়ে ফেলতে কতোক্ষণ? তবু সে একপা একপা কওে এগিয়ে গেলো তার কাছে। কি জানি, খাবার পেয়ে লোকটা যদি খুশি হয়?
কিন্তু বৃথা ভাবনা। তাকে জোরেশোরে ধাক্কা দিয়ে ফেলেই সে এক ছুটে পালিয়ে গেল অন্ধকারে- সমুখের কুয়াশার রাজ্যে। পরক্ষণে সে হারিয়ে গেল। হতভম্ব পিপ উঠে পড়ে খুঁজতে লাগলো প্রথমোক্ত সেই দানব লোকটাকে।
কিন্তু বেশিক্ষণ তাকে খুঁজতে হলো না। লোকটা নিজেই তার সামনে এসে দাঁড়ালো।
বোতলটা কি এনেছিস, র্যা? পিপ বললো, - ব্র্যান্ডি।
লোকটা তখুনি বোতল হাতে বসে পড়লো পাশেই একটা ঝোঁপের মধ্যে। সেও তখন ঠকঠক করে কাঁপছে।
পিপ কিছুক্ষণ চেয়ে দেখলো তাকে। তারপর বললো, জ জ¦র হয়েছে আপনার, তাই না?
ডান হাতে বোতলটা বাঁ হাতে আস্ত রুটি, লোকটা কোক্রমে বললো, হবে হয় তো, কে জানে?
পিপ দেখলো লোকটার দানবীয় মেজাজ এখন অনেকটাই নরম।
কথা বলতেও তার ভালো লাগলো। চারপাশ কেমন নিঃসার, চুপচাপ। একঠায় দাঁড়িয়ে থাকা যায় নাকি?
সে আরো বললো, এসব ঝোঁপঝার জঙ্গল আর ভালো লাগে না। ওখানে কেউ পড়ে পড়ে ঘুমায় না। আপা বলেন, জ্বর হয়ে যায়। ওসব লতাপাতা গাছগাছড়া বেজায় খারাপ!
মুখ গুমরো দানবটা এবার দাবড়ে উঠলো পিপকে,
চুপ কর, বাচ্চা“ আগে খেতে দে, তারপর শুনবো তোর বাঁচা মরার কথা।
দুহাতের মুঠোতে রুটি, মুখে দাঁতে চেপে ধরে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলো সে পিপকে। সে চোখ ধূর্ত, কুটিল। অবিশ্বাসের দৃষ্টি দেখলো পিপ তার চোখে। সংকুচিত হয়ে এলো পিপ।
রুটিটার কিছুটা চিবিয়ে খেয়ে ফেললো সে। তারপর চিবিয়ে চিবিয়ে জিজ্ঞেস করলো, ঠকাচ্ছিস না তো রে ছোকরা? কাউকে সঙ্গে এনেছিস, র্যা?
তীব্রভাবে মাথা নাড়তে নাড়তে বললো পিপ, না না কাউকেই নয়। আমি একলা এসেছি। একদম একলা।
দানবের চাহনি আস্তে আস্তে শান্ত হলো, ধীরস্থির হলো। বোতলের ব্র্যান্ডিটুকু টেনে টেনে গিলতে লাগলো সে! তারপর বললো, তুই ব্ড্ড ভালো ছেলে রে। বড্ডো ভালো ছেলে।
পিপ তার কথা শুনে খুশি হলো। বললো, ওর জন্যে কিছু রাখলে না? ও তো খাবে?
পিপের কথা শুনে লোকটা বিদ্যুত বেগে লাফিয়ে উঠলো, কার কথা বলছিস? কে সে?
পিপ দূরে সরে গেলো। কাঁপা গলায় বললো, সেই যে জোয়ান রা-রাক্ষসটা! যার কথা তখন বললেন আমাকে লুকিয়ে আছে। যে,
ওঃ! এতোক্ষণে লোকটার মনে হলো, পিপকে সেই যে মিথ্যে ভয় দেখিয়ে রেখেছে একটা কল্পিত রাক্ষসের নাম করে, ছেলেটা তাকেই জিইয়ে রেখেছে মগজে।
হাঃ, হাঃ, হাঃ
লোকটা রুটিটে কামড় বসিয়ে বললো, না না তাকে কিচ্ছু দিতে হবে না।
পিপও নাছোড়বান্দা, বললো, আপনি বললেন না তখন তাকে ঠেকিয়ে রেখেছেন? কিন্তু ও তো দৌড়ে বেড়াচ্ছে এখানেই, আমি দেখলাম,
হাতের রুটি আর বোতল ছুড়ে ফেলে দিয়ে লোকটা পরক্ষণে দানবীয় শক্তিতে জড়িয়ে ধরলো পিপকে,
তুই দেখলি? কাকে দেখলি? কোথায় দেখলি?
এইতো আসবার সময়। গাছের তলায় আধোজাগা আধো ঘুমিয়ে। আমি ভাবলাম, আপনি..
কথা ঘুরিয়ে নিয়ে পিপ আরো বললো, আপনার মতোই জামা-কাপড় হাতে পায়ে লোহার শেকল। আর কাল রাতে কামানের আওয়াজ শোনেন নি আপনি?
লোকটা তখুনি মনে মনে ভাবলো, হায় ভগবান! তাহলে এরই মধ্যে ওরা টের পেয়ে গেছে!
পিপকে বললো, দেখ ভেবে বলবি, ঠিক করে বলতো তার মুখে মানে মুখে..
কাটা দাগ দেখেছি। পিপ বললো। নিজের ডান চিবুকে হাত রেখে জিজ্ঞেস করলো লোকটা, কোথায়? এখানে?
ঢোঁক গিলে পিপ বললো, হ্যাঁ ঠিক ওখানেই। মস্তবড়ো কাটা দাগ।
দানবটার কন্ঠে ক্রুদ্ধ গর্জন সরবে জেগে উঠলো,
দেখিয়ে দে কোথায় দেখেছিস তুই সেই শয়তানটাকে! ওটাকে আমি কুকুরের মতো গলা টিপে নিকেশ করবে। পায়ের শেকলটায় করাত চালা হতভাগা, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিস কি?
দে হাতুড়িটা আমার হাতে দে। আর যা, দূর হয়ে যা তুই এখান থেকে।
ডক্ষপ্ত দানবটা সেখান থেকে এক রকম খেদিয়েই তাড়ালো পিপকে। (চলবে)