সাম্প্রতিক প্রকাশনা

গ্রেট এক্সপেক্টেশন (মূল উপন্যাস: চার্লস ডিকেন্স) চতুর্থ পরিচ্ছেদ

আলতামাস পাশা লেখাটি পড়েছেন 1279 জন পাঠক।
 চতুর্থ পরিচ্ছেদ

প্রথম থেকেই পিপের মুখে কোন কথা নেই। ভগিনীপতির মনের ভাব তার অনুকূল বুঝে এতোক্ষণে সে মুখ খুললো।
আমরা যদি তাদের সামনে পড়ে যাই?
তা কেন? আমরা তো অনেকটা পিছিয়ে আছি। ওরা ঠিক অন্যদিকে লুকিয়েছে। আমি টাকা বিলিয়ে দিতে রাজি, ওরা যদি পালাতে পারে।
জো’র মুখেই থেকে গেলো কথাগুলো-
আচম্বিতে সমুখের দিকে ভয়ানক চীৎকার ধ্বনী উঠলো তা যেমন হৃদয়বিদারক, তেমনি ভীতিপ্রদ!
সে কিসের আর্ত হাহাকার?
যেদিক থেকে চীৎকার শোনা গেলো সকলেই দৌড়ে গেলো সে-দিকে।

দূর থেকে দেখা গেল, দু’জন পলাতক মরণ কামড়ে জড়াজড়ি করছে। চারদিক থেকে সশস্ত্র পুলিশ দল এগিয়ে আসছে দেখে তাদেও মধ্যে বলবান ডাকাতটা এক হাতে চিবুকে কাটা দাগ  হাতে পায়ে শেকল আঁটা খুনেটার গলা চেপে ধরে অন্য হাত শুন্যে তুলে চেঁচিয়ে বলে উঠলো,

গার্ড গার্ড, এই দিকে, এই দিকে। আমি পলাতক শয়তানকে ধরেছি। আমি ধরেছি। মনে রাখবে, শয়তানটাকে ধরিয়ে দিয়েছি আমি-আমি নিজেই। পুলিসের লোক চিবুক কাটা খুনেটাকে যেমন আটক করলো, বলবান ডাকাতটাকেও তেমনি হ্যান্ডক্যাপ লাগিয়ে বন্দি করলো।

ডাকাতটা বললো, 
আমাকেও তোমরা এভাবে আটকে নেবে? ঐ শয়তানটাকে ধরিয়ে দিলাম, তারপরেও? তাই ভালো। তোমাদের কাছে বিচার চাওয়া বৃথা জানি বৃথা। তবু মনে রাখবে আমিই ধরিয়ে দিয়েছি।

চিবুকে কাটা দাগওয়ালা তখন রাগে বিরক্তিতে গর্জে উঠলো,
কিন্তু তোমরা দেখেছো, খুনেটা আমার গলা টিপে মারতে চেয়েছিলো। আর একটু হলেই আমি নির্ঘাৎ মারা পড়তাম!!

ডাকাতটা এবার অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো,
গলা টিপে মারতে গিয়েও মারতে পারিনি, বলছিস শয়তান? মারতে চাইলে তোকে মারতে পারতাম না আমি? আমি তোকে ধরেছি। আটকেছি, পালাতে দেইনি। সকলেই তা দেখেছে। এখন তোর হয়ে ওরা কথা বলবেই তো। কুকুর! সব কুকুর!!

হঠাৎ ডাকাতটার  চোখ পড়লো পিপের দিকে। তা’হলে এখানে এভাবে তাকে ধরলো যারা, তার মধ্যে পিপও আছে দেখছি।

এবার ক্যাপ্টন বললো, যথেষ্ট হয়েছে, এবার ফেরো। 

পিপ কিন্তু নিজে থেকেই কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়িয়ে সুযোগ খুঁজছি! সে সুযোগ খুঁজছিল, ডাকাতটার চোখে-চোখে কথা কইবার জন্যে। কথা তো বলা যায় না। লোকটা জানুক, এতে তার কোন হাত নেই। সে এতোটুকুও বিশ্বাসঘাতকতা করেনি। সে নির্দোষ। সে তাকে ধরিয়ে দেয়নি, এটুকু তাকে না জানিয়ে পিপ বাড়ি ফিরবে কেমন করে?

তাই সেখানে পুুলিশের মধ্যে দাঁড়িয়ে-দাঁড়িয়ে সে কেবলি সুযোগ খুঁজতে লাগলো। হঠাৎ তাদের দু’জনের মধ্যে চোখাচোখি হয়ে গেলো। পিপের মনে হলো লোকটা বলবান ঠিকই, কিন্তু আগে যেমন তার কাছে দানব-দানব লেগেছে, আদতে সে তেমন নয়। এখন কেমন একধরনের রহস্যময় চাউনি তার চোখ দুটোতে, শান্ত, স্থিও, উজ্জ্বল।

পিপ মাথা নাড়লো ধীরে ধীরে যেন বললো, বিশ্বাস করো, এতে আমার হাত নেই, আমি তোমাকে বিপদে ফেলিনি।
পিপের স্পষ্টই মনে হলো লোকটা বুঝেছে, ঠিকই বুঝেছে তার নিঃশব্দ ইংগিত।
যাক। এতোক্ষণে পিপের মন ভালো ভারমুক্ত।

ওরা চলে যেতে উদ্যত হলো।

সহসা লোকটা ঘুরে দাঁড়িয়ে বললো, আমার পালিয়ে যাওয়া সম্পর্কে একটা কথা বলতে চাই। 
ক্যাপ্টেন তলোয়ার আস্ফালন করে বললো, কোন কথা আর না। যা বলবার বলতে পারো, তবে এখানে না।
লোকটা নিঃশংকচে সশস্ত্র ক্যাপ্টেনের মুখোমুখি গিয়ে দাঁড়ালো। তারপর বললো, এ অন্য ব্যাপার। গ্রামের কামাড়শালা থেকে আমি করাত নিয়ে পালিয়ে এসেছি। হয়তো কামার রেগে গিয়ে-

ক্যাপ্টেন তার মুখের কথা শেষ হবার আগেই চেঁচিয়ে বলে উঠলো,

এই জো, তোমার কিছু হারান গেছে?

কামার জো ধীরে ধীওে বললো, যদি যেয়েই থাকে, যাক। আমার কোন দুঃখ নেই তাতে। তারপর ডাকাতটার মুখের দিকে চেয়ে জো আরো বললো,
জানি নে কি অপরাধ তোমরা করেছো। কিন্তু তার জন্যে তোমাদের এই দশা আর যারাই করুক, আমরা পারতাম না।
না পারতাম না।

কি রে পিপ, পারতাম আমরা?
পিপ মাথা নেড়ে বললো, না। মুখেও বললো, না ন্ না!

(চলবে)

পাঠকের মন্তব্য


একই ধরনের লেখা, আপনার পছন্দ হতে পারে

bdjogajog