সাম্প্রতিক প্রকাশনা

গ্রেট এক্সপেক্টেশন (মূল উপন্যাস: চার্লস ডিকেন্স) পঞ্চম পরিচ্ছেদ

আলতামাস পাশা লেখাটি পড়েছেন 1179 জন পাঠক।
 পঞ্চম পরিচ্ছেদ

গাঁয়ের সেরা ধনী মিস হ্যাভিসহাম। মস্ত বাড়ি। পাঁচিল ঘেরা। ছোট ছেলেমেয়েদের কাছে সে বাড়িটা ছিল বিস্ময়ের মত। মিস হ্যাভিসহাম অদ্ভূদ মেজাজের মানুষ। তাঁর বাতিকের শেষ ছিল না। গাঁয়ে তাকে নিয়ে অনেক প্রবাদ চালু আছে। বাইরের কারুর সঙ্গে তার মিলমিশ নেই। নিজেদের আবেষ্টনীর মধ্যেই তারা বদ্ধ থাকতো। কি তাদের রহস্য, কি তাদের গোপনীয়তা, কেউ তা জানতো না।

একদিন কামার জো পিপকে নিয়ে সেই রহস্যপুরীতে গিয়ে হাজির। দুরুদুরু বুক নিয়ে পিপ এলো। সত্যি সত্যিই ভারী লোহার মস্তো গেটটা ভিতর থেকে বন্ধ। তারা সেখানে উপস্থিত হলে পিপের বয়সী একটি সুন্দরী মেয়ে একটি লোহার চাবি হাতে এলো গেটের কাছে।

মেয়েটার চোখ পিপের উপর। জিজ্ঞেস করলো, কি নাম?
জবাব দিল কামার। বললো, কামার জো আর পিপ!
মনে হলো, তাদের  আসবার কথা মেয়েটা আগে থেকেই জানতো। পিপের নাম শোনামাত্রই বলে উঠলো,

পিপ? এক্ষুণি ভিতরে এসো তুমি। তারপর নিজের নাম বললো,
আমি স্টেলা।
কামার জো সেখান থেকেই বিদায় নিয়ে ফিরে এলো। পিপ ভিতরে গেল স্টেলার সাথে।

রহস্যপুরীর মধ্যে ঢুকে পিপ অবাক বিস্ময়ে ঘুরে দেখতে দেখতে স্টেলার পিছুৃ পিছু চলতে লাগলো। স্টেলা মাঝে মাঝে ফিরে ফিরে পিপের ছোট গম্ভীর মুখের দিকে চেয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে মুখ ভাঙতে লাগলো।

পিপকে নিয়ে স্টেলা রওয়ানা হলো উপরে- দোতালায় মিস হ্যাভিসহামের ঘরে। মিস হ্যাভিসহামের ঘরের দরজাটা দেখিয়ে দিয়ে স্টেলা ইঙ্গিতে বললো,
-	ভিতরে ঢুকে পড়ো,ছিচকে খোকা!
ছিচকে খোকা! ডপপ চমকে উঠলো তার সম্বোধনে। কিন্তু কি বলবে সে সম্পূর্ণ অচেনা-অজানা মেয়েটাকে?
তবু নীচু গলায়  বললো সে, ‘আগে তুমি ভিতরে ঢোকো না।’

তেড়ে উঠলো মেয়েটা। মুখে ঝামটা দিয়ে বললো, যাবে তা যাও না বাপু, জ্বালাচ্ছো কেন আমাকে?
আমি যাবো না।
রহস্যপুরীই বটে।
লোকজনের আভাস নেই কোনদিকে। স্টেলা তাকে সেখানে ফেলেই কোথাও চলে গেলো।

খানিকক্ষণ একলা দাঁড়িয়ে থেকে শেষে সেই চওড়া সুন্দর মোটা কাঠের সিঁড়ি পেড়িয়ে গিয়ে ঢুকে পড়লো সে মিস হ্যাভিসহামের ঘরের মধ্যে। 

সুুন্দর সুন্দর আসবাবপত্রে ভর্তি ঘরখানি। কতো বাহারের পরদা ঝুলছে জানালায় –জানালায় আর দরজায়। সামনের দিকে মস্ত আর উচুঁ হাতলওয়ালা চেয়ারে বসে মিস হ্যাভিসহাম-রহস্যপুরীর একচ্ছত্রা সম্রাজ্ঞী, এ গাঁয়ের সর্বশ্রেষ্ঠ রহস্যময়ী। পিপ তাঁকে এই প্রথম দেখতে পেলো। দেখে তার বিস্ময়ের অবধি রইলো না।  খুব দাবি পোশাক পরেছেন তিনি। দামি দামি পাথরের অলংকার। পুরু সুন্দর সার্টিনের পোশাক, সিল্ক লেস- কিন্তু পরনের সব কিছুরই রং সাদা ধবধবে দুধ রঙ সাদা। দেখতে খুবই ভালো লাগলো পিপের। হঠাৎ পিপের মনে হলো, এ যে বিয়ের পোশাক। চার্চে যাবার আগে মেয়েরা পরে থাকে। মিস হ্যাভিসহামের পরণে অবিকল সেই ধরণের পোশাক দেখে তার আরও বিস্ময় লাগলো মনে। কি ব্যাপার! কি ব্যাপার ?

চুলে রঙিন ফুলের গোছা! গলায় কণ্ঠি, দামি পাথর থেকে ঠিকরে বেরুচ্ছে জ্যোতি। হাতের আংটি, রুলী সবই দামি পাথর বসানো। আর  সবই বহু মূল্যবান। সারা ঘরময় আরও কত সাটিন- কতো সিল্ক- কতো লেস ছড়িয়ে আছে। মাথায় ওড়না চড়ানো। মুখের দিকে অর্ধেকটা ঢাকা। ড্রেসিং টেবিলটায় একটা সুদৃশ্য আয়না: তার দু’পাশে অনেক কয়টা মোমদানিতে বাতি জ্বলছে।

ঘরবাড়ি ভারি মায়ময়- মোহময় মনে হলো পিপের।

মাথার টুপি হাতে নিয়ে ঘরের মধ্যখানে গিয়ে দাঁড়ালো পিপ। মিস হ্যাভিসহাম বললেন,
‘কাছে এসো। ভয় পাচ্ছো কেন? কিসের ভয়? জানো, আমি সেই থেকে আজও পর্যন্ত একবারটিও সূর্যে্র মুখ দেখিনি? আমাকে ভয়? আমাকে ভয় কেন? একটানা এতো কথা পিপ শোনে নি কোন দিন। তাও এমন সব রহস্যময় কথা। বিস্ময়ে অবাক হয়ে সে তাকিয়ে থাকলো মিস হ্যাভিসহামের দিকে। (চলবে)

পাঠকের মন্তব্য


একই ধরনের লেখা, আপনার পছন্দ হতে পারে

bdjogajog