ভাইরাস আক্রমণ এবং আন্ত গ্যালাক্সী সমঝোতা (সায়েন্স ফিকশন কল্পকাহিনী)
(৩)
মার্সিয়াসের স্ট্যাডি রুমে এখন আমি। আশ্চর্য্য সুস্বাদু ভালকান কফির কাপ আমার সামনে। চার পাশে ঝিঁ ঝিঁ পোকার অবিরাম ডাক শোনা যাচ্ছে। মনে হয় শহর থেকে অনেক দূরে কোথাও নির্জন এলাকায় এসে পড়েছি। গাড়িতে আসার পথেও তা উপলদ্ধি করছিলাম। দোতালা একটা বাড়ি। ইংরেজিতে যাকে বলে দুপ্লেক্স বাড়ি। একতলার স্ট্যাডি রুমে আমি বসে বসে ভাবছিলাম দোতালায় কী করছে মার্সিয়াস? দোতায় মার্সিয়াস কি বিশেষ কিছু করছে? এরকম নির্জন জায়গায় দোতালা বাড়ি সে ম্যানেজ করলো কিভাবে?
কি ভাবছো বন্ধু? মার্সিয়াস হাসি মুখে আমার দিকে এগিয়ে আসে।
ভাবছি দুনিয়া জুড়ে এই প্যানডেমিকে দায়ী কারা? তোমরা কোন কলকাঠি নাড়ো নি তো আবার?
মার্সিয়াস আমার কথায় হো হো করে হেসে উঠে। বলে, বন্ধু, বাংলায় তোমরা একটি কথা বল না যে,‘যত দোষ নন্দ ঘোষ’? তোমার অবস্থাও দেখছি তেমনি হয়েছে। তুমি কেনো ভুলে যাচ্ছো যে পৃথিবীর ভালোই চাই আমরা ভালকানরা। কারণ পৃথিবীর জীববৈচিত্র্যের উপর পরোক্ষভাবে আমরাও নির্ভরশীল। সব সময় সেমতোই কাজ করি আমরা। কিন্তু এবারের এই প্যানডেমিকে তোমাদের নিজেদের নিরুবুদ্ধিতাই কাজ করছে। প্রকৃতিকে তোমরাই অশান্ত করে তুলেছো। তোমাদের দেশের কথাই ভাবো, কতো শতাংশ বনভূমি রক্ষা পেয়েছে তোমাদের হাত থেকে? রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যাতেই কতো বনভূমি উজাড় করে দিয়েছো তোমরা। প্রাকৃতিকভাবে নির্ণীত হাতির চলাচলের পথে বসতি গড়ে নিজেরাও বিপদে আছো, হাতিকেও বিপণ্ন করেছো। আরো অনেক উদাহরণ দিতে পারি। কিন্তু এখন তা থাক। বর্তমানে তোমরা পৃথিবীতে সার্স কোভিড-২ ভারাইসের যে প্যানডেমিক দেখছো তা তোমাদের অবিরত প্রকৃতি বিরুদ্ধ ও প্রকৃতি ধ্বংস করার কাজেরই বিরূপ ফলাফল।
ভালকানের বিজ্ঞানীদের গবেষণায় দেখা গেছে প্রকৃতিতে বাঁদুর থেকেই এর সংক্রমণ ঘটেছে মানুষের দেহে। মাঝখানে কোন প্রাণী নেই। থাকলেও তার অস্থিত্ব নষ্ট করে দিয়েছে পৃথিবীর শক্তিশালী কোন দেশ। তবে আমাদের কাছে অন্যরকম তথ্যও আছে।
মার্সিয়াস এবার থামে। ভালকানের বিশেষ ধরনের কফি নিয়ে একটি কিশোর বয়সী ছেলে ঘরে প্রবেশ করেছে। মার্সিয়াস চোখের ইশারায় তাকে আমাদের সামনে রাখা টেবিলের উপর তাকে কফি রাখতে ইঙ্গিত করে।
ভালকানের বিশেষ কাপে এবার দেওয়া হয়েছে ব্রাজিলিয়ান কফি। মার্সিয়াস আমাকে কফি এগিয়ে দিয়ে নিজের কাপে চুমুক দিয়ে বলে, ‘বন্ধু চিন্তায় পড়েছো মনে হচ্ছে?
চিন্তা করবো না! কি বলছো তুমি সারা দুনিয়ার কী অবস্থা তা ভাবতে পারো?
মার্সিয়াস তার মুখে মৃদু ভৎসর্ণার হাসি ফুটিয়ে বলে ওঠে, আজকের অবস্থার জন্য দায়ী কিন্তু তোমরা পৃথিবীর মানুষরাই। বিশেষত ধনী দেশগুলো। এসব দেশ তাদের গোপন এবং নিয়ন্ত্রিত ল্যাবগুলোতে এমন কিছু গবেষণা চালাচ্ছে যা পৃথিবীর সাধারণ মানুষ কল্পনাও করতে পারবে না।
জীবাণু অস্ত্র বানানোর গবেষণা থেকেই সার্স কোভিড-২ ভাইরাসের সৃষ্টি হয়েছে ভালকানের বিজ্ঞানীদের কাছে এসম্পর্কে তাৎপর্যপূর্ণ তথ্য আছে। সে যাই হোক, সোহেল, তোমাকে এখানে আনা হয়েছে অন্যকারণে। তোমার মনে আছে হয়তো যে, তোমার এক কাাজিন তামান্না ভারতের শান্তিনিকেতনে পড়ার সময় প্যারাসাইকোলজিক্যাল সমস্যা আক্রান্ত হলে তোমার অনুরোধে আমরা তাকে সে অবস্থা থেকে সুস্থ করার দায়িত্ব নিয়েছিলাম।
হ্যাঁ তা আবার মনে থাকবে না কেন? কিন্তু তাতে কি? তাকে আবার কেন?
তাকে আবার দরকার এখন। সেই সাথে তোমাকেও।
কিন্তু কেন তা জানতে পারি কি?
বাংলাদেশে আমাদের স্টেশনে তোমাদের ডিএনএ টেস্ট করা হবে। কারণ আমরা মনে করি সাধারণ মানুষদের চেয়ে তোমাদের ডিএনএ এর কাঠামো অন্যরকম হবে। করোনা প্রতিরোধে পরবর্তী প্রজন্মের ভ্যানসিন তৈরিতে এটা বিশেষভাবে কাজে লাগবে।
তোমার পৃথিবীর বিজ্ঞানীরা যে ভ্যাকসিন বানাতে গবেষণা করছেন বা প্রায় চূড়ান্ত স্তরে রয়েছেন তা কিন্তু প্রতিষেধক নয়। এটা প্রয়োগ করা হলেও কোভিড আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থেকেই যাবে। তাছাড়া সারা পৃথিবীতে একসাথে এ ভ্যাকসিন দেওয়া না গেলে ভাইরাসের নানান মিউটেশন চলতেই থাকবে। শুধুমাত্র পৃথিবীর বিজ্ঞানীরা না, আমারাও জানি না এই সার্স কোভিড-২ ভাইরাস কতবার মিউটেশন করবে। কতখানি প্রাণীঘাতি থাকবে ভবিষ্যতে। তবে আরো বেশ কয়েকটি ওয়েভ আসতে পারে। একটা বিষয় তো খ্বুই চিন্তার। যদি এই ভাইরাসের বর্তমান রূপ অন্য প্রাণীকে সংক্রোমিত করে এবং পরবর্তীতে তা মিউটেশন ঘটিয়ে আবার মানুষের দেহে ফিরে আসলে কি হবে বা কা কতখানি মারাত্নক হবে সেটাও ভ্যাকসিন আবিষ্কারের পরেও চিন্তার কারণ হবে। এটাই এখন আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে, তুলছে। (চলবে)