সাম্প্রতিক প্রকাশনা

জিন্দা লাশ (পর্ব ১)

আলতামাস পাশা লেখাটি পড়েছেন 234 জন পাঠক।
 জিন্দা লাশ
পর্ব ১

ফজরের নামাজটা শেষ করে নিজের বাড়ির দিকে ফিরছিল ফুলছড়ি গ্রামের করিম ব্যাপারী। গঞ্জে দোকান আছে তার। আয় রোজগারো ভালো। গাভী রয়েছে ৮/১০টি। ছোটখাট খামারই বলা চলে। দুধ বেচেও ভালো আয়। অনেকগুলো খড়ের গাদা করিমন ব্যাপারীর। খামারের কাছাকছি চার নম্বর খড়ের গাদার খড়গুলো চারপাশে এলোমেলোভাবে পড়ে আছে দেখে ব্যাপারীর সন্দেহ হলো নিশ্চয় রাতের বেলা কেউ খড় চুরি করতে এসেছিল! ভয়ানক ব্যাপার! দ্রুত পা চালিয়ে সে খড়ের গাদার কাছে পৌঁছলো। খড়ের গাদা ভালোভাবে পরীক্ষা করতে গিয়ে হঠাৎ তার চোখদুটি ভয়ে বিস্ফোরিত হয়ে গেলো। একী দেখছে সে? পায়ে রশি বাঁধা মানুষের পা দেখা যাচ্ছে। ভয়ে গলার ভিতর শুকিয়ে আসে করিমন ব্যাপারীর। আতংকিত হয়ে দ্রুত ঘরে আসে খড়ের গাদার সামনে থেকে। দ্রুত বাড়ি পৌঁছে বিছানায় শুয়ে স্ত্রীকে পানি দিতে বলে। করিমনের স্ত্রী ফুলমনি অবাক হয়ে যায় সাত-সকালে নামাজ ফেরত স্বামীর ঘর্মাক্ত মুখের পানে তাকিয়ে। দ্রুত পানির গ্লাস এগিয়ে দেয় তার দিকে। ঢকঢক করে পানি পান করে চলে করিমন। তারপরও হাঁপাতে থাকে।

ফুলছড়ি  গ্রামের চেয়ানম্যান আবেদ ভুঁইয়া নাস্তা সেরে সবেমাত্র স্ত্রীর হাত থেকে চায়ের কাপটি নিশ্চিলেন। এমন সময় তার ডান হাত আবদুল্লাহ সেখানে উপস্থিত হয়। চেয়ারম্যানের কানে পৌঁছে দেয় কোন অজানা ভীতিকর সংবাদ। আবেদ ভুঁইয়ার আর চা খাওয়া হয় না। তাড়াতাড়ি তৈরি হতে ভেতরের ঘরে চলে যায় সে। তৈরি হয়ে বৌকে তার মোবাইলটা দিতে বলে। চম্পা বেগম তাড়াতাড়ি করতে যেয়ে বোতাম ফোনটি এগিয়ে দিতে গিয়ে মুখ ঝামটা খায়। আরে বুদ্ধির ঢেঁকি, আামার স্মার্ট ফোনটা দাও জলদি, দেরি হয়ে যাচ্ছে। চম্পা বেগম স্বামীর ঝাড়ি হজম করে এগিয়ে দেয় তার স্মার্ট ফোনটি।

চেয়ানম্যান আবেদ ভুঁইয়া আবদুল্লাহ’র সঙ্গে যেতে যেতে জিজ্ঞাসা করে, ঘটনা ঘটলো কেমনে? রাতে তোরা কই আসিলি হারামজাদার দল? 

আমার দোষ কি ভাই! অনেকদিন তো  হলো আমাদের এলাকায় ফালাফালি সব বন্ধ। এটা কেঠা করছে বুঝতে পারছি না। মনে হয় ভাই গাজী গো কাম হইতে পারে।

চুপ কর। তোর কাছে প্রমাণ আছে? আর কোন মতলবে করিমন ব্যাপারীর খড়ের গাদায় লাশ লুকাইছে? ওই ব্যাটা তো কারো আগে-পিছে নাই। হেরে ফাসাইয়া লাভ কি ক দেখি?

তা তুই হুনলি কেমতে?

আমি সকালে করিমের দোকানে চা খাচ্ছিলাম। বৌ কইছিলো ঘরে আনাজ নাই, চাউল নাই। তাই চা খাইয়া ভাবছিলাম কদমতলীর হাটে যামু। 

ওই ব্যাটা এতো প্যাঁচাল  পারতে কে কইছে? বিরক্ত হয় চেয়ানম্যান আবেদ ভুঁইয়া।

না মানে! থতমত খেয়ে যায় আবদুল্লাহ।

আসল কথা ক, কে আগে শুনছে?

ব্যাপারী প্রথম কইছে ইমাম সাহেবকে। হেই চায়ের দোকানের সামনে আমাগো যারে যারে পাইছে সগোলরেই বলছে।

আর আমার সর্বনাশ করছে, স্বগোক্তি করে চেয়ানম্যান আবেদ ভুঁইয়া। 

তারমানে এতক্ষণে গ্রামের প্রায় সব মানুষই লাশ পাবার খবর পেয়ে গেছে। দুঃশ্চিতায় আবেদ ভূঁইয়া মোবাইলে দারোগা নূরুদ্দিনের নম্বর খোঁজে।

দারোগা নূরুদ্দিন মহা ঝামেলায় আছে গত কয়েকদিন ধরে। তার থানা এলাকায় তিনজন মানুষ নিরুদ্দেশ, নিখোঁজ। এ ব্যাপারে ওপর মহলের খুব চাপ আসছে তার ওপর। এমন একটি সময় ফুলছড়ি গ্রামের চেয়ারম্যানের ফোন তাকে আরো বেশি অস্থির করে দেয়।

সব খবর শুনে দারোগা নূরুদ্দিন খেঁকিয়ে বলে, চেয়ারম্যান সাহেব ব্যাপারীর খড়ের গাদার তিন ফুটের মধ্যে কাউকে যেতে যেতে দেবেন না। আমরা আসছি। আর শোনেন, সাংবাদিক থেকে সাবধান! খুব সাবধান! খবরটা যেন আর বেশি কানে ছড়াতে না পারে। সদর থেকে র‌্যাবও আসতে পারে। চোখ-কান সব খোলা রাখবেন।

ব্যাপারী বাড়ির আশপাশ এখন বিশাল জটলা। লোকমুখে শোনা যাচ্ছে আশ-পাশের গ্রাম থেকে নিখোঁজ হওয়া তিনজন মানুষের একজনের লাশ নাকি ব্যাপারীর খড়ের গাদায় হাতপা বাঁধা অবস্থায় পড়ে আছে। মুহূর্তেই এত লোক সমাগম দেখে ভ্যান গাড়িতে বসে গেছে বিভিন্ন খাবারের দোকান। বেলা যত বাড়ছে, পরিস্থিতি ততোই উত্তপ্ত হচ্ছে। বাতাসেও ভেসে বেড়াচ্ছে নানান কথা। (চলবে)

পাঠকের মন্তব্য


একই ধরনের লেখা, আপনার পছন্দ হতে পারে

bdjogajog