জিন্দা লাশ
পর্ব ২
দুপুর নাগাদ পুলিশের গাড়ি ফুলছড়ি গ্রামে পৌঁছাল। ওসি নূরুদ্দিন গাড়ি থেকে নামতেই চেয়ারম্যান আবেদ ভুঁইয়া আর করিমন ব্যাপারী তাকে ঘিরে ধরে। করিমনকে বলতে শোনা যায়, দারোগা স্যার আমার কোন দোষ নাই। খড়ের গাদা আমার হতে পারে, কিন্তু লাশের ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। ওসি নূরুদ্দিন চটে ওঠে, দারোগা কি , এ্যা? বলেন ওসি স্যার।
আপনি গত রাতে কই ছিলেন ওসি নূরুদ্দিন ব্যাপারীকে জিজ্ঞেস করে।
ওসি স্যার, বিশ্বাস করেন গতরাতে আমি বাসাই ছিলাম। দরকার হলে আপনি আমার বউ, বাচ্চাকে জিজ্ঞেস করেন।
ওরা তো আপনার শিখানো কথাই বলবে, আপনাকে বাঁচাতে। ব্যাপারী অসহায় ভাবে তাকায় চেয়াম্যানের দিকে। চেয়ারম্যান আবেদ বুঝতে পারে নিরীহ মানুষ ব্যাপারী এবার বুঝিবা ধরা খাইতে চলছে। সামনের নির্বাচনের কথা ভেবে সকল দিক রাখতে চেয়ারম্যান আবেদ ভুঁইয়া বলে, কিন্তু ওসি স্যার প্রমাণ ছাড়া তো কাউকে সন্দেহ করা যাবে না। আমাদের করিমন ব্যাপারী ব্যবসায়ী মানুষ, এসব লাশ বিষয়ে নিজেকে খামোখা জড়াবে কেন? হয়তোবা তার কোনো ব্যবসায়িক শক্র এমনটা করেছে। তদন্তের আগে তো কিছু বলা ঠিক না।
ওসি নূরুদ্দিন চেয়ারম্যান আবেদের দিকে চোখ কটমট করে সামনের দিকে এগোয়। ঠিক তখনই ঘটনাস্থলে র্যাবের গাড়ি হাজির হয়।
এতক্ষণ যে মৃদু গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল চারপাশে র্যাবের আগমনে তা শুনশান নিরবতায় রূপ নিল। চেয়ারম্যান আবেদের ডান হাত আবদুল্লাহ দ্রুত জনতার ভিড়ে নিজেকে মিশিয়ে দিল। চেয়ারম্যান আবেদ দু’বার ঢোক গিললেন আর করিমন ব্যাপারীর মনে হল তার পেটের ভিতরটা যেন গুলিয়ে উঠছে। বমি বমি পাচ্ছে।
র্যাব কমান্ডার মেজর জামশেদ তার বাহিনীসহ একটু দূরে দাঁড়িয়ে রইলেন। এদিকে ওসি নূরুদ্দিনের নির্দেশে দু’জন এসআই লাশটিকে খড় সরিয়ে বের করে আনতে গেল লাশ শনাক্ত করার জন্য। লাশের মুখায়ব ওসির সঙ্গে থাকা ছবি তিনটির সাথে মেলাতে হবে। যদি মিলে যায় কোনটি তা’হলে সমস্যা আরও বাড়বে বই কমবে না।
এসআই দু’জন এগিয়ে যায়। আস্তে খড় সরিয়ে লাশটির পূর্ণ অবয়ব ফুটে উঠতে থাকে। দূর থেকেই বোঝা যায় যে লাশটির দু’টি পা রশি দিয়ে একত্রে বাঁধা নয়। কেবলমাত্র একটি পায়ে রশি রয়েছে তাও পেচানো অবস্থায়।
‘লাশটিকে ধরে খোলা জায়গায় নিয়ে আসুন। লাশ শনাক্ত করতে হবে ছবি আর পরনের পোশাক দেখে’ র্যাব কমান্ডার মেজর জামশেদ বলে ওঠেন।
দু‘জন এসআই মিলে একজন মাথা দিক থেকে এবং একজন পায়ের দিক থেকে লাশটি ওঠাবার চেষ্টা করে। কিন্তু লাশটি তোলার আগেই হঠাৎ লাশটি সোজা হয়ে উঠে বসে। চমকে গিয়ে এসআই দু‘জন দু‘হাত দূরুত্বে পিছিয়ে যায়।
“আস্তাগফেরুল্লাহ হেতো দেহি জিন্দালাশ!!”
গ্রামের মসজিদের ইমাম সাহেব কখন এসে পিছনে দাঁড়িয়েছিলেন ভিড়ের মধ্যে কেউ তা টের পায় নি।
এবার তার কথায় চেয়ারম্যান আবেদ, ওসি নূরুদ্দিন আর মেজর জামশেদ বিস্মিত অবস্থা থেকে বাস্তবে ফিরে আসেন।
মৃত মনে করা লোকটি সবার পানে কেমন যেন ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। আস্তে আস্তে যেন বলে, পানি, পা নি খামু পানি। (চলবে)