জিন্দা লাশ
পর্ব-৩
ওনাকে পানি দেন তাড়াতাড়ি, র্যাব কমান্ডার জামশেদ নির্দেশ দেন। পুলিশের একজন এসআই গাড়ি থেকে পানির বোতল নিয়ে দৌঁড়ে যায় ‘জিন্দা লাশ’ বলে কথিত লোকটির পানে। মানুষটির নিজে নিজে পানি খাবারও ক্ষমতা নেই। তার মাথা কাত করে বোতলের পানি পান করায় এসআই নেয়ামত মওলা।
ওয়্যারলেসে খবর পেয়ে ফুলছড়ি গ্রামের নিরবতা ভেঙ্গে একটি অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছায় সেখানে। করিমন ব্যাপারীর খড়ের গাদায় পাওয়া মানুষটিকে সদার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশ বা র্যাব কারো কাছে থাকা ছবির সাথেই মানুষটির কোন সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায় না। সদরের ডাক্তাররা জানান লোকটি মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছে। চিকিৎসার পাশাপাশি সেবাযত্ন প্রয়োজন। আরও প্রয়োজন নিকট আত্নীয়স্বজনদের সান্নিধ্য। তবে চিকিৎসা পেলে হয়তো কিছুটা সুস্থ স্বাভাবিক হবে। পরিচয়ও পাওয়া যেতে পারে তখন।
দিনসাতেক পার হয়ে যায়। ফুলছড়ি গ্রামের ‘জিন্দা লাশ’ সদর হাসপাতালের ডাক্তারদের চিকিৎসা আর নার্সদের সেবাযত্নে কিছুটা সুস্থ হয়ে ওঠে। খাবার – ওষুধ খেলেও কোনো কথা বলে না। ডা: কিবরিয়া অবশ্য এব্যাপারে চরম আশাবাদী। তার কথা হচ্ছে, ‘আরে আজকাল তো সুস্থ স্বাভাবিক মানুষরাও সহজে কথা বলতে চায় না। আর এই মানুষটিতো দীর্ঘদিনের অবহেলা, অযত্নে বাকরুদ্ধ। তবে কথা সে বলবেই একদিন। আর তখন সব রহস্যের অবসান হবে। কিন্তু সেদিনটি কবে আসবে তা ডা: কিবরিয়াও জানেন না।
ফুলছড়ি থানার ওসি নূরুদ্দিনের মনে এখন অন্য স্বপ্ন। খড়ের গাদায় পাওয়া ‘জিন্দা লাশ’এর পরিচয় পাওয়া গেলে এবং এর সঙ্গে বড় কোনো ঘটনার সম্পর্ক থাকলে আর তা সমাধান করতে পারলে ওসি সাহেবের প্রমোশন এবার ঠেকায় কে? নিজের সব সোর্সদের সে এই কাজে লাগিয়ে দেয়। দিনসাতেক পরে খবর আসে ফুলছড়ি গ্রামের আওলাদ মিস্ত্রি ওই ভবঘুরে লোকটাকে গ্রামে আসতে দেখেছিল। কোত্থেকে আসছে জিজ্ঞাসা করলে না’কি কেবল ফেল ফেল করে চেয়ে থেকেছে, কিন্তু কোন কথা বলেনি। আওলাদের জরুরি কাজ থাকায় সে আর লোকটার জন্য সময় নষ্ট করে নি। তবে লোকটার পায়ে রশি বাধা ছিল কিনা তা সে মনে করতে পারছে না।
ফুলছড়ি থেকে তিন-চার গ্রাম পরে পলাশপুকুর থেকে দিনদশেক পরে খবর একটা মিললো মোটামুটি। পলাশপুরের আবিদ মণ্ডলের চার ছেলে। চার ছেলেই না’কি তাদের বাপকে বহুদিন ধরে চাপ দিচ্ছে জমি-বাড়ি বিক্রি করে বা বন্ধক রেখে টাকা দিতে যাতে তারা বিদেশ যেকে পারে কাজ করতে। তাদের বাবা না’কি অনেকবার তাদের বুঝিয়ে বলেছে দেশেই কিছু একটা করতে। কিন্তু তাদের কেউই তাতে রাজি হয় নি। গত প্রায় মাসখানেক হলো আবিদ মণ্ডলের কোন সন্ধান পাচ্ছিলো না তার গ্রামের মানুষজন। ছেলেদের জিজ্ঞেস করলে বলতো বাবা ঢাকা গেছে।
তারপর একদিন সকাল থেকে পলাশপুকুরের গ্রামবাসী আবিদ মণ্ডলের ছেলেদেরও আর দেখতে পেল না। বিষয়টা তাদের কাছে সন্দেহের উদ্রেক করে। সে সন্দেহ আরো তীব্র হয় যখন বাইরে থেকে গাড়িতে করে লোকজন এসে আবিদের বাড়ি এবং জমির দখল নেয়। তাদের কাছ থেকেই জানা যায় আবিদ মন্ডলের ছেলেরা না’কি তাদের বাবার হঠাৎ মৃত্যুতে জমিবাড়ি বিক্রি করে এখান থেকে চলে গেছে। (চলবে)