ভাইরাস আক্রমণ এবং আন্ত গ্যালাক্সী সমঝোতা (সায়েন্স ফিকশন কল্পকাহিনী)
৪.
সোহেল ঠিক এই মুহূর্তে তোমাকে দেবার মতো কোন খবরই আমার কাছে নেই। তোমাকে শুধু কিছু তথ্য দিতে পারি এই মুহূর্তে আমি।
বল কি বলবে। মার্সিয়াস আমি সত্যি খুব অস্থির হয়ে আছি। প্লিজ কিছু বল। শোনো, সোহেল, তোমার জানা দরকার যে, মানুষের দেহে ঢুকে কোনো কোষের বাইরের স্তরে ভাইরাসের নোঙর ফেলা রুখে দিতে পারে মানবদেহের চার শ্রেণীর এন্টিবডি। যারা আগে করোনা ভাইরাসের অন্যান্য রূপে সংক্রমিত হয়েছেন, সংক্রমিত হওয়ার পর ভ্যাকসিন নিয়ে ফের সংক্রমিত হয়েছেন বা সংক্রমিত না হয়েও যথন সব ক’টি পর্বের কোভিড ভ্যাকসিনই নেবেন সামনের দিনে ভ্যাকসিন তৈরি হবার পরে, তখন তাঁদের সবার দেহেই এই চারটি শ্রেণীর এন্টিবডির হদিশ পাওয়া যাবে।
করোনা ভাইরাস শরীরে ঢোকার পর মানব দেহকোষের একেবারে বাইরের স্তরে নোঙর ফেলে তাদের দেহের একেবারে বাইরে থাকা শুঁড়ের মতো স্পাইক প্রোটিন দ্বারা। তাদের নোঙর ফেলতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় মানবকোষের বাইরের স্তরে থাকা বিশেষ একধরনের প্রোটিন যার নাম, ‘এসিই-২ রিসেপ্টর প্রোটিন’।
আমাদের ভালকানের গবেষকরা দেখেছেন যে, সেই স্পাইক প্রোটিনের বিশেষ কয়েকটি জায়গা রয়েছে যেগুলো একেবারেরই বদলায় না, তা সে ভাইরাসের যতই মিউটেশন হোক না কেন। মানবদেহে প্রথম হদিশমেলা চার শ্রেণীর এন্টিবডি ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনের সেই বিশেষ স্থানগুলোকে ভালোভাবে সনাক্ত করবে বা চিনে ফেলবে প্যানডেমিকের সামনের দিনগুলোতে। তখন তারা স্পাইক প্রোটিনের সেই বিশেষ স্থানগুলোকে নিষ্ক্রিয় করে দিতে পারবে খুব দক্ষতার সাথে। এই বিশেস জায়গাগুলোর মিউটেশন হলে ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিন পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যাবে। তখন মানুষ বা অন্যান্য প্রাণীর দেহকোষে নোঙর ফেলার শক্তিও তারা হারিয়ে ফেলবে বলে ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনের ওই বিশেষ অংশগুলোর কোনো মিউটেশন হবে না।
মানুষের শরীরে পাওয়া চারটি শ্রেণীর এন্টিবডির এতেই সুবিধা হয়ে যাবে। তারা স্পাইক প্রোটিনের ওই বিশেষ জায়গাগুলোকে নিষ্ক্রিয় করে দিয়ে ভাইরাসকে মানুষের দেহকোষের বাইরের স্তরে নোঙর ফেলতেই দেবে না। ফলে মানব দেহকোষে ঢুকে খুব তাড়াতাড়ি বংশবৃদ্ধি করে কোষপ্রাচীর ফাটিয়ে অন্য কোষে ঢুকে সংক্রমণের আর সুযোগ থাকবে না ভাইরাসের। এই এন্টিবডিগুলোর সংখ্যা দ্রæত আরো বাড়িয়ে তাদের আরো বেশি সক্রিয় এবং শক্তিশালী করে তুলতে হবে। তখন বানানো যাবে আরো অভিনব নতুন কোনো ভ্যাকসিন। এই কাজটিই করছেন ভালকানের বিজ্ঞানীরা।
কিন্তু তোমাকে আর তামান্নাকে আমাদের এক্ষেত্রে নিঃশর্ত সহায়তা দিতে হবে বেশি প্রশ্ন না করে। জানো তো এখন পর্যন্ত দেখা গেছে, এই রোগে মেয়েরা তুলনামূলক কম আক্রান্ত হচ্ছে। যদিও এর প্রাথমিক কারণ হরমোনজনীত। কিন্তু ভালকানের বিজ্ঞানীরা এক্ষেত্রে দ্রুততম সময়ে আরো বিস্তারিত জানতে চাচ্ছেন।
‘প্লিজ তুমি তামান্নার সাথে যোগাযোগ কর। মার্সিয়াস আমার মোবাইলটা এগিয়ে দেয়।
তামান্না ঢাকায় চলে এসেছে কি’না জানি না। ভারতে করোনা ছড়িয়ে পড়লে ওর ঢাকায় চলে আসারই কথা। মোবাইলে তামান্নার নম্বরটা খুঁজে বের করে রিং দিলাম। চারটি রিং হবার পরই ওপাশ থেকে তামান্না ‘হ্যালো বলে ওঠে, আমি ‘হ্যালো বলতেই, আদনান ভাইয়া বলে চিৎকার করে ওঠে তামান্না। কানের পাশ থেকে তাই মোবাইলটা সরিয়ে নিতে হয় আমাকে!
এই আদনান ভাইয়া! কেমন আছো? কতদিন দেখি না। কি খবর বল। এই করোনার মধ্যে তুমি কেমন আছো, বলতো?
আমি জবাব দেই, আস্তে বাবা আস্তে এতো কথার উত্তর দিতে সময় লাগে না?
প্রথম কথা হল আমি ভালো আছি। কিন্তু তোকে আমার খুব দরকার একটা কাজে। সামনা –সামনি কথা বলতে হবে। আমার সঙ্গে মার্সিয়াসও থাকবে।
ওমা! মার্সিয়াস ভাই বাংলাদেশে? মানে ঢাকায় কি করে? কি ব্যাপার বলতো?
দেখা হলে সব বিস্তারিত জানতে পারবি। এখন বল কোথায় দেখা করবি।
মার্সিয়াস ভাই কোথায় দেখা করতে চায়? পাল্টা প্রশ্ন করে তামান্না। তোদের উত্তরার বাসাতেই দেখা করতে চায়।
ও কে ভাইয়া, তা’হলে এখানেই আসতে বলো। বাসায় তো আমি ছাড়া কেউ নেই। মা-বাবা তো কানাডায় আটকা পড়েছে। তোমাদের কেউ দেখে ফেলবে সে ভয় নেই।
মার্সিয়াস আমার পাশ থেকে সাথে সাথে বলে, কাল সকালেই আমরা আসছি তা বলে দাও।
পরদিন কালো একটা পাজেরো করে আমি আর মার্সিয়াস তামান্নাদের উত্তরার বাসায় পৌঁছোলাম সকাল ন’টার মধ্যেই।
মার্সিয়াসকে এতদিন পর দেখে তামান্না খুব খুশি। তার ধারণা ভালকানরা খুব ভালো এবং অতিকার্যকর ভ্যাকসিন বানিয়ে ফেলেছে। এখন শুধু তা মানুষের শরীরে পরীক্ষা করে দেখাটুকুই বাকি। হঠাৎ সে প্রশ্ন করে আচ্ছা মার্সিয়াস ভাইয়া, ভালকারদের করোনা হয় নি? (চলবে)