সাম্প্রতিক প্রকাশনা

বাতওয়ালের ক্ষুধা (দ্বাদশ পরিচ্ছেদ)

আলতামাস পাশা লেখাটি পড়েছেন 1223 জন পাঠক।
 বাতওয়ালের ক্ষুধা

দ্বাদশ পরিচ্ছেদ

চারপাশ এখন গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত। আকাশ বেশ পরিষ্কার। অগণিত তারা সেখানে জ্বলজ্বল করছে। প্রকৃতি যেন কিসের প্রতীক্ষায় উন্মুখ হয়ে আছে। দূরে কোথাও রাত জাগা পাখির একটানা হাপু হাপু ডাক শোনা যাচ্ছে। অনেক দূরে কোথাও বাংলাদেশের রয়েল বেঙ্গল টাইগারের নতুন এক প্রজাতি গর্জন করছে। নিজের অস্তিত্ব সে যেন সগৌরবে ঘোষণা করছে। 

রশিদ গাইন দৃষ্টি আকর্ষণ করলো রব্বানী সাহেবের। অবাক হয়ে তিনি দেখলেন বাওয়ালীরা বিড়বিড় করে কি যেন সব পড়ছে। বনের দিক থেকে ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা কেমন একটা বাতাস বইছে। এত ঠাণ্ডা  সে বাতাস  যে দাঁড়িয়ে থেকে তা সহ্য করা যায়না। বাওয়ালীদের একজন তীক্ষ্ম স্বরে রব্বানী সাহেবকে জিজ্ঞাসা করলো, সাহেব তোমরা কি বাঘ মেরেছো? রশিদ গাইন আমতা আমতা করে কি যেন বললো। উত্তর এলো, ওই ব্যাটা আহাম্মক গুলি করতে গেলি কেন? এখন মজাটা টের পাবি হাড়ে হাড়ে। মজাটা যে কি তা বোঝা গেল মিনিট পনেরোর মধ্যেই। বাওয়ালীগুলো চোখের নিমেষে কোথায় জানি হারিয়ে গেল। সারাটা আকাশ অদ্ভুত লাল রঙের মেঘে ছেয়ে গেল। প্রচণ্ড হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডা  বাতাসে বাধ্য হয়ে রব্বানী সাহেব তাঁবুর ভিতরে ঢুকলেন। তারপর আর কিছু মন নেই। 

রব্বানী সাহেবের ঘুম যখন ভাঙলো মনে হল তিনি শূন্যে ভাসছেন, না হয় অন্য কোনো ব্যাপার। ঠাণ্ডা র জন্য তিনি কম্বল জড়িয়ে শুয়েছিলেন। এখনও সেভাবেই আছেন, তবে শূণ্য দিয়ে ছুটে চলেছেন শুধু। কোথায় কোন অজানা উদ্দেশ্যে তা ভালো করে বোঝার আগেই প্রফেসর রব্বানী এসে পড়লেন একটি আলোকিত মঞ্চের মতো স্থানে। সেখানে কিছু অদ্ভূত আকৃতির প্রাণীকে দেখতে পেলেন। তার মনে হল প্রাণীগুলো যেন তার আসার অপেক্ষায়ই ছিল। প্রফেসর রব্বানী এরপর মঞ্চের একটি বিশেষ আসনে গিয়ে অবতরণ করলেন। আসনের ওপর প্রফেসর রব্বানী এসে দাঁড়াতেই নীল একটি রশ্মি তার দেহের এসে পড়লো। তিনি কোন কিছুই অনুভব করলেন না। অথচ কয়েক মিলি সেকেণ্ডের মধ্যেই তার দেহটি আলোকিত মঞ্চের আসন থেকে একটি স্নিগ্ধ আলোময় ঘরে ¯স্থানান্তরিত হয়ে গেল। আস্তে আস্তে সেই  স্নিগ্ধ আলোও মিলিয়ে গেল। এবার প্রফেসর রব্বানী বুঝতে পারলেন যে তিনি একটি অদ্ভূত আকৃতির ঘরে এসেছেন। এর দেয়ালগুলো কেমন যেন প্লাস্টিকের মতো বস্তু দিয়ে বানানো। তিনি দেয়ালে হাত দেয়া মাত্র একটি সিড়সিড়ে অনুভূতি বোধ করলেন। তারপর আবার একটি সবুজ আলোয় ঘরটি আলোকিত হয়ে উঠলো।

এবার প্রফেসর রব্বানীর পক্ষে এটি বোঝা সম্ভবপর হল যে এটি আসলে দেয়াল নয়, একটি দরজা। জ্বলে উঠা সবুজ আলোর একটু নীচেই নির্দেশনা দেওয়া আছে কিভাবে দরজা খুলতে হবে। প্রফেসর রব্বানী নির্দেশনা মোতাবেক পাসওয়ার্ড লিখে এন্টার টাইপ করতেই দরজাটি খুলে গেল। তিনি এসে পড়লেন একটি লম্বা করিডরের মধ্যে। পুরো করিডরটি উজ্জ্বল সাদা আলোয় আলোকিত। প্রায় দশ মিনিট একটানা হাঁটার পরে তিনি চলে এলেন বিশাল একটি হল রুমে। অবাক হয়ে প্রফেসর রব্বানী দেখতে পেলেন লম্বা হল রুমের দুপাশে সারি সারি মানুষের দেহ কাচের ডোমের মধ্যে ঢাকা রয়েছে। তবে দেখতে প্রতিটি দেহই যেন জীবন্ত। দেখলে মনে হয় তারা ঘুমিয়ে আছে, ডাকলেই ওঠে বসবে। প্রফেসর রব্বানী বুঝতে অসুবিধা হলো না যে, দেহগুলোকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে মাত্র। প্রত্যেকটি দেহের পাশেই নির্দিষ্ট কাঁচের জারে রাখা রয়েছে বিশেষ ধরণের রাসায়নিক পদার্থ। হালকা হলুদাভ এসব রাসায়ানিক পদার্থের গঠন বুঝছে সময়ের প্রয়োজন। তার আগে নিজের নিরাপত্তার কথাও প্রফেসর রব্বানীকে ভাবিয়ে তুললো। ঠিক তক্ষুনি কোথা থেকে যেন মৃদু একটা সংকেত আসতে লাগলো। সেই সঙ্গে সঙ্গে প্রফেসর রব্বানীর প্রচণ্ড ঘুম পেতে লাগলো। (চলবে)

পাঠকের মন্তব্য


একই ধরনের লেখা, আপনার পছন্দ হতে পারে

bdjogajog