অসম সময়ে বসবাস এথন ‘সুবোধের’; পালিয়ে বেড়াবার সময় প্রকট হয়ে উঠে। হায় সুবোধ! তোমার স্বপ্ন এখন কানাডা যাবার; অস্ট্রেলিয়ার পথে তোমার কল্পনার চোখ এখন ছুটে যেতে চায়। অথচ তোমার নিজ দেশ, আজ যেন তোমার জন্য পরবাসে থাকা! কত আর লক্ষ্যহীন ভাবে স্বার্থপরের মতো্ পালিয়ে বেড়াবে তুমি? কিউবার বিপ্লবের কথা এথনও কী স্বপ্ন হয়ে ভাসে?
গত রাতে নিদ্রাহীন আমি অলীক স্বপ্ন দেখে শিউরে উঠি যেন; সবুজ ঘাসে ঢাকা একটি ট্রেন ছুটে চলে পদ্মানদীর তীর ঘেষে গোধূলী বেলায়। ট্রেনের সব কামরাগুলো যেন আমার শৈশবের হারিয়ে যাওয়া দিন; প্রতি ক্ষণে হারিয়ে ফেলা সুখকর দিন ও রাত; আমি যেন, প্রাণপনে চিৎকার করি; অজানা ভয় ও পাবার আশায়! দয়া কর ‘সময়’ একটুখানি দাঁড়াও; এখন্ও যে আমার আরো অনেক কিছু করার আছে, অনেক স্বপ্ন হয়নি পূরণ, অনেক কাজ রয়ে গেল বাকি!!
সুবোধের গায়ে আজ তেলের গন্ধ প্রকট হয়; কখনও তা সয়াবিন, কখনও তা সরষে, ইদানিং গন্ধ ভাসে বাতাসে ডিজেল, পেট্রল অথবা অকটেনের; কোনটা তার বেশি প্রয়োজন সুবোধ বোঝে না; যেমন বোঝে না কোটি টাকার মালিকরা আসলে ঠিক কতো টাকার প্রয়োজন তাদের? সুবোধের বোধে আসে না এখন কর্পোরেট কালচার; রবীন্দ্রনাথ যেখানে কাওয়ালীতে একাকার!
এখন আর কলা বাদুর উড়ে যায় না কড়িকাঠের খোপে খোপে; ডাকে না আর পেঁচা ডুমুর গাছের নির্জন অন্ধকারে, সংসার জীবন এখন বড্ডো বেশি আধুনিক। যুদ্ধের খবর গ্রামেগঞ্জে আগেও এসে পৌঁছতো, এখন পৌঁছায় অন্যরকমভাবে। ডলার, পাউন্ড আর রিয়েলের কারসাজিতে গ্রামীণ জনপদে আর রাত নামে না। ঘুম নেই, গরিব গরিবস্য মানুষ আর সদ্য ধনী হওয়া মানুষের চোখে। জরাগ্রস্ত পৃথিবীকে ক্রমশ গ্রাস করে দাবানল, গ্রীষ্মে খড়তাপ আর প্রবলতর শীতের কাঁপন। কোন কিছুই নেই আর আগের মতন; বিশ্বাস, নির্ভরতা আর প্রেম: সব কিছু ছায়ায় হারায়; পরে থাকে পোড়া ঘা্স, পশু আর ক্ষতময় জীবন।।
নিস্তব্ধ রাত্রির শপথ সামনের অন্ধকার পথ কাঁটায় ভরা। অমাবস্যা আজ, কৃষ্ণপক্ষের শেষ তিথি। চন্দ্রকলার অদৃশ্যকাল; এমন অমানিশা রাতে প্রেতপুরীতে চলে গোপন অভিসার।। এমন নিকষ রাতে তুমি নাই- আমি নাই সব একাকার।।