নির্যাতনের টেকনিক গ্যাস চেম্বার এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ (ধারাবাহিক কাহিনী)
পর্ব-২
বিশ্বযুদ্ধের ব্যাপকতার কারণে পৃথিবীর মানুষ Auschwitz এর ঘটনা তেমন গুরুত্বারোপ করেনি। সেসময়কার নিউইর্য়ক টাইমসের বড় খবর ছিল এই যে, সোভিয়েত বাহিনী বাল্টিক অঞ্চল দখন করে নিয়েছে। সোভিয়েত রেড আর্মির দখল করা বহু নগরীর তালিকার মাঝে Oswiecim (Auschwitz এর পোলিশ ভাষার নাম) বিস্মৃতপ্রায় ছিল। এই স্থানটি তখন দৃশ্যত ভুতুরে শহরে পরিণত হয়েছিলো। শহরটির আয়তন যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ার সমান। এই শহরের অর্ধ লক্ষ মানুষের অধিকাংশই পিছনে ফেলে গেছে তাদের মাথার চুল এবং পুরে যাওয়া দেহের গন্ধ। এতো কিছুর পরেও ১৯৪৫ সালের জানুয়ারি মাসে ৬৫,০০০ মানুষ সেখানে জীবিত ছিল।
পোল্যান্ডের পূর্ব দিক থেকে যখন সোভিয়েত বাহিনী অগ্রসর হচ্ছিল, নাৎসীরা তখন জার্মানীর দিকে পালিয়ে যাচ্ছিল, সর্তকতামূলক ব্যবস্থায় বন্দিদেরও তারা ঢাল হিসেবে সাথে নিয়েছিলো, যাদের অধিকাংশকেই পথের মাঝে হত্যা করা হয়। মাত্র ৭,০০০ মানুষ বেঁচে ছিলো রাশিয়ান বাহিনীর দ্বারা মুক্তির প্রতীক্ষায়। এদের অধিকাংশই ছিল মুমূর্ষু এবং এই মুক্তিলাভও তাদের মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করতে পারেনি।
আলবার্ট গ্রিনহলজ একজন ফরাসী ইহুদি। তার স্মৃতিতে ভাসছে ঘোড়ার পিঠে রেড আর্মির মঙ্গল জাতের সৈন্যদের স্মৃতি। তার ভাষায়, ‘ এরা ছিল চমৎকার’। একটি শুকর মেরে আনলো তারা। পরিষ্কার না করেই এটিকে বারো টুকরো করলো। বিশাল একটি মিলিটারি পাত্রে আলু ও বাঁধাকপিসহ রান্না করলো। তারপর তা রুগ্ন ও অসুস্থদের খেতে দিলো’। এধরনের খাবারের প্রভাব দীর্ঘদিন অনাহারী, ক্ষুধার্ত মানুষগুলোর জন্য ছিল নাৎসীদের কর্মকাণ্ডের মতোই প্রাণঘাতী ব্যাপার। এসব কারণে Auschwitz এ এখনও শারীরিক দিক থেকে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ রয়েছে। তাই মৃত্যু থেকে বেঁচে যাওয়া কেউ কেউ এটি উপলদ্ধি করেন যে, তাদের স্মৃতি সময় বা বয়সের প্রেক্ষিতে অস্পষ্ট হয়ে যায়নি। ১৯৮৭ সালে “ Survival in Auschwitz” বইয়ের লেখক প্রিমো লেভি কুয়ায় ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন, সম্ভবত স্মৃতির যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে।
হয়তো তাই অস্ট্রিয়ান দার্শনিক জিন আমেরি বলেছেন, যে একবার নির্যাতনের শিকার হয়েছে, সে বরাবরই নির্যাতিত বোধ করে।’ তিনিও দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের ৩৩ বছর পরে নিজ হাতে নিজের জীবন ছিনিয়ে নেন, যা নাৎসীরা বিষময় করে দিয়েছিল। Auschwitz এর ভয়াবহ স্মৃতির পরে বেঁচে থাকার চেয়ে পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ না করাটাই শ্রেয় ছিল বলে তার কাছে মনে হয়েছে। অবশ্যই সম্ভবত, কারথেজিনিয়ান চিন্তাভাবনাও এরকমই ছিল। প্রতিটি প্রজন্ম তাদের বিশেষ বিশেষ রক্তক্ষয়ী গণহত্যার ভেজা রক্তের ওপর পা দিয়ে ইতিহাসের বুকে মার্চ করে চলে। তবে Auschwitz যে ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞের একটি অংশ ছিল তা মানব সভ্যতার গণহত্যার ইতিহাসে একটি অবর্ণনীয় কাহিনী হয়ে বিরাজ করবে। (চলবে)