দ্বাদশ পরিচ্ছেদ
পিপ ফিরে এলো লন্ডনে।
তার মন নানাচিন্তায় ভারাক্রান্ত।
হার্বাটকে সমস্তই খুলে বললো সে। তাকেই বিশ্বস্ত বন্ধু মেনে নিলো সে।
এতোদিন যা সে লুকিয়ে রেখেছিল, এবারে তাই সে খুলে বললো স্পষ্টবাক্যে।
বললো,
হার্বাট, স্টেলাকে আমি ভালোবাসি। সে ছাড়া..
হার্বাট বাধা দিয়ে বললো,
আমাকে অতো করে বলতে হবে কেন? আমি তো সবই জানি।
পিপ ভয়কংর অবাক হলো তার কথা শুনে।
তুমি জানবে কেমন করে? আমি তো তোমাকে এ সম্পর্কে কিছু বলিনি।
হার্বাট হাসতে লাগলো,
তুমি একটা আস্ত গাধা! আমাকে যখন না বলেই চুল কেটে এসে ঘরে ঢোকো তুমি,
তোমার দিকে চেয়েই কি আমি তখন বুঝতে পারিনে যে তুমি কোথায় গিয়েছিলে, কি করে এসেচো।
তেমনি এবার তোমাকে দেখেই আমি সবটা আঁচ করে নিয়েছি।
পিপ বুঝতে পারলো তার নিজের মধ্যেও নিশ্চয় এসব পরিবর্তন ঘটেছে যা সে হার্বাট এর চোখকে ঠকাতে পারেনি।
সেই থেকে হার্বাট তাকে বারবারর স্টেলা সম্পর্কে সতর্ক হতে বললো। কিন্তু পিপের মন যে মানে না।
বাইরে আসা যাওয়া বন্ধ করে দিলে পিপ। ঘরের মধ্যে বসে বসে কেবলি ভাবে স্টেলার কথা।
পিপ বললো,
তুমি বুঝতে পারছো না, হার্বাট, ভেবে দেখো তো,
স্টেলা হাজার মাইলেরও দূরের রহস্যপুরীতে রয়েছে।
আর এখানে লন্ডনে আমি..
হার্বাট বললো,
এমন করে তুমি ভাবতেই পারো না, পিপ।
কাজকর্ম একেবারে ছেড়েছুড়ে দিয়েচো।
এমন করে নিজেকে নষ্ট করতে পারো না তুমি।
মিস হ্যাভিসহামের কথা মনে নেই তোমার?
এমন করছো জানলে তিনি তোমাকে বিপদেও ফেলতে পারেন।
তাঁর মনের মতো তোমাকে হতেই হবে,
সেকথা ভুলে যেতে পারো না তুমি।
পিপ তার বন্ধুর কথা শুনে গেলো।
পরে বললো,
আমি কি আর সে কথা জানি না হার্বাট।
জানি সবই,
বুঝি সবই।
কিন্তু মন যে মানে না।
কয়েক সপ্তাহ পরের কথা।
রীচমন্ড থেকে স্টেলার চিঠি এলো।
পিপ লাফিয়ে ওঠে সে চিঠি পেয়ে।
কী খুশি।
কী আনন্দ!
কী আনন্দ!
তাতে স্টেলা যেতে লিখেছে।
হার্বাটকে বলে কয়ে সে একরকম ছুটেই গেলো রীচমন্ডে, স্টেলার কাছে।
কিন্তু স্টেলার কথা শুনে তার বুকের রক্ত হিম হয়ে গেলো।
পিপ তুমি কি কিছুতেই সতর্ক হবে না?
বিস্মিত হতচকিত পিপ জানতে চাইলো
কি ব্যাপার? কিসের থেকে সতর্ক হবো?
নিষ্ঠুরনিস্তব্ধ তার মুখ, নিশ্চল, শান্ত তার দুটো চোখ।
বললো, কেন বুঝতে চাও না?
আমার কাছ থেকে সর্তক হবে না তুমি?
পিপ আবেগপূর্ণ কণ্ঠে বললো,
তোমাকে যেন না ভালোবাসি, সে কথাই বলচো বুঝি?
স্টেলার পরিবর্তন নেই।
ক্ষুরধার তার চাউনি, বললো,
‘না বুঝতে চাইলে আমি তবে কি করবো? তুমি অন্ধ, অন্ধ!
পিপ হাল ছাড়তে রাজী হলো না। আবহাওয়া হালকা করে দেবে বলেই বললো সে,
তা হোক সে ভাববো অন্য সময়।
এবার তো তুমিই আমাকে ডেকে এনেচো,
এবারে তো আমাকে তুমি দুষতে পারো না, স্টেলা।
স্টেলা বাগানে বসে পড়লো।
তারপর বললো,
তা সত্যি বলতে পারো। মিস হ্যাভিসহাম আমাকে ডেকে পাঠিয়েছেন।
তুমি নিয়ে চলো না। পারবে, সময় হবে তোমার?
ভারি খুশি হয়ে সোৎসুকে পিপ বললো,
সময় হবে না, কি যে বলো! নিশ্চয় নিয়ে যাবো তোমাকে।
কবে যাবে?
চলো না, আমরা আজই যাই। স্টেলা বললো।
তার কণ্ঠ ভারি শান্ত, ভারি অচঞ্চল।
(চলবে)