সাম্প্রতিক প্রকাশনা

নির্যাতনের টেকনিক গ্যাস চেম্বার এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ (ধারাবাহিক কাহিনী) পর্ব-১

আলতামাস পাশা লেখাটি পড়েছেন 107 জন পাঠক।
 নির্যাতনের টেকনিক গ্যাস চেম্বার এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ (ধারাবাহিক কাহিনী)
পর্ব-১

Auschwitz এর শেষ দিনগুলো

ইউরোপে তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ পর্যায়। 

সময় ১৯৪৫ সালের ২৭ জানুয়ারি, দুপুরবেলা। 

স্থান, নাৎসী বাহিনীর অন্যতম বন্দি শিবির Auschwitz। 

ত্রিশ বছর বয়সী ওলন্দাজ ইহুদি সাল ডি লিমা বন্দি শিবিরের বাইরে বরফের ওপর এসে দাঁড়ালো। পাঁচ মাস আগে এই বন্দি শিবিরে নাৎসী জার্মানরা তাকে নিয়ে এসেছিলো। জার্মানরা ক্যাম্প থেকে সরে যাবার পর নয় দিনের দিন লিমা মুক্ত আকাশের নিচে এসে দাঁড়ালেন। জানুয়ারী মাসের ১৮ তারিখে তিনি আশংকা করছিলেন যে জার্মান এসএস বাহিনী ব্যারাকের সাথে তাকেও উড়িয়ে দেবে।  সেক্ষেত্রে বিকল্প যে পথটি খোলা ছিল তাহলো তুষারময় পোলান্ডের শীতের মধ্যে অজানার উদ্দেশ্যে মার্চ করতে বাধ্য হওয়া। কিন্তু বেচারা ডি লিমা শুয়ে থেকে মৃত্যু বরণের পথই বেছে নিয়েছিলেন। চারদিন ঘুমিয়ে কাটালেন। পিছনে পড়ে থাকা  একজন বন্দির সুগার কিউব খেয়ে কোনোরকমে প্রাণে বেঁচে রইলের তিনি। জানুয়ারি মাসে ২৭ তারিখ সামান্য সুস্থ বোধ করলেন তিনি, পায়ের ওপর ভর দিয়ে দাঁড়াতে সমর্থ হলেন এবং ঘরে দরজা ও বন্দি শিবিরের গেট পের হয়ে বাইরে এসে দাঁড়ালেন। প্রথম যে বিষয়টি লিমার দৃষ্টিগোচর হল তা হচ্ছে বরফের ওপর অসংখ্য বাদামী রঙের লোমশ কুকুর। লিমা ভাবলেন, আহা কী চমৎকার ছোট ছোট কুকুর সব। তারপর ওইসব কুকুর যখন চলতে শুরু করলো তখন বোঝা গেল ওরা আসলে পশমের টুপি আর সাদা ক্যামোফ্লেজ পরা রাশিয়ান সৈন্য যারা সবেমাত্র Auschwitz ক্যাম্পটি জার্মান দখলমুক্ত করেছে। ক্যাম্পটিতে মুক্তিও যেন আসলো দৃশ্যত অসংগতির মধ্য দিয়ে।

উল্লেখিত বন্দি শিবিরটি ঘেরাও এবং মুক্ত করতে চতুর্থ রেড আর্মির যে ডিভিশন অংশ নেয় তাদের একমাত্র জীবিত কমান্ডার লে: জেনারেল  ভ্যাসিলি পেটরেনকো ছিলেন কতিপয় ভয়াবহ যুদ্ধের নিষ্ঠুরতম কাণ্ডকারখানার প্রবীণতম প্রত্যক্ষদর্শী। জেনারেল তার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, ‘আমি দেখেছি বহুলোকের হত্যাকাণ্ডের  দৃশ্য, ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রাখা শত শত মানুষ এবং জীবন্ত পুড়িয়ে মারা লোকের মৃতদেহও আমি দেখেছি, কিন্তু তাও আমি বলবো যে, Auschwitz এ যা দেখেছি, সেজন্য আমি মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলাম না।’

জেনারেল পেটরেনকোকে যা হতবাক করেছে তা’হলো কিশোর-কিশোরীর অগণিত সংখ্যা, এমন কি এদের মধ্যে ছোট শিশুও ছিল বিপুল সংখ্যায়। জার্মানরা দ্রুত পালাতে গিয়ে এদের ফেলে রেখে যায়।  এসব শিশুর ওপর জার্মান এসএস বাহিনী জঘন্য ধরনের মেডিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতো। এক্ষেত্রে , Auschwitz এর ক্যাম্প ডাক্তার জোসেফ মেনজগল এর বিশেষ ভূমিকা ছিল। ওয়ারশ’র ব্যর্থ বিদ্রোহের রাজনৈতিক শিশু বন্দিরাও এদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল। তবে জেনারেল পেটরেনকো  এ সম্পর্কে জানতেন না। তাই তিনি বলেছিলেন, ‘ আমি ভেবেছিলাম আমরা যুদ্ধে রয়েছি। চার বছর ধরে আমরা যুদ্ধ করছি। লাখ লাখ শক্তিশালী সেনাবাহিনী উভয়পক্ষেই যুদ্ধরত ছিল এবং সহসা আপনি অসংখ্য শিশুদের সম্মুখীন হলেন। কিভাবে তারা সেখানে এসেছিলো? এ বিষয়টি আমি কোনভাবেই হজম করতে পারি না।’

পরবর্তীতে অবশ্য জেনারেল পেটরেনকো বুঝতে পেরেছিলেন এটি এমন  একটি জায়গা যেখানে শিশুদের মেরে ফেলার জন্যই আনা হয়েছিলো। শত শত, হাজার হাজার শিশু পুড়ে ছাই হয়ে বাতাসের সাথে মিশে গেছে এবং জেনারেল পেটরেনকো’র বাহিনী এসব শিশুর দেহভস্মের ওপর দিয়ে নিজেদের অজান্তেই মার্চ করে গেছে। (চলবে)

পাঠকের মন্তব্য


একই ধরনের লেখা, আপনার পছন্দ হতে পারে

bdjogajog