পর্ব-৩
যথন আফ্রিকার রুয়ান্ডারা তাদের প্রতিবেশীকে মিটিয়ে মারে লাঠির আঘাতে তখন আমরা একে মানবিক আচরণের দুঃখজনক ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত করি। আমরা এই অবস্থায় বলে থাকি যে, মানুষের এই প্রবণতা কখনও পরিবর্তিত হবে না।
কিন্তু Auschwitz ছিল পৃথিবীর বুকে একটি নতুনতর পৈশাচিক গণহত্যার ঘটনা। এখানে এর ব্যাপক প্রকৃতির মেকানিজম ব্যবহার হয়েছে হাজার হাজার মানুষকে মৃত্যু শিবিরে পরিবহনে, হত্যাকান্ডে। একদিনে মধ্যেই এসব মানুষকে পুড়িয়ে ভস্মে পরিণত করা হয়েছে। পুরো প্রক্রিয়াকে মানুষকে মেরে ফেলার একটি শিল্পায়ন হিসেবে হিসেবে অ্যাখ্যায়িত করা যায়। এর থেকে যে ভীতিকর সম্ভাবনার সৃৃষ্টি হয় তা হচ্ছে আধুনিক টেকনোলজির বিকাশের সাথে সাথে মনুষ্য চরিত্র প্রকৃতপক্ষেই পরিবর্তিত হয়ে গেছে। আর তাই এক্ষেত্রে অবাক হবার মতো কোন বিষয়ই নেই যে কেন জেনারেল পেটরেনকো আজ ৫০ বছর ধরে মানসিকভাবে অসাচ্ছদ্য বোধ করছেন। এই দিনটিতে Auschwitz এ বিশ শতক যেনো আয়নায় দেখতে পায় নিজেকেই আর ভয়ে আতংকে মুখ ফিরিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে চায়।
নাৎসী বাহিনীর বিভিন্ন নির্মূলকারী ক্যাম্পের মধ্যে Auschwitz ছিল একমাত্র ও সবচেয়ে বড় এবং এক্ষেত্রে এমনটি ভাবার কোন কারণ নেই যে, এটিই ছিল সবচেয়ে বীভৎস ক্যাম্প। আকৃতির দিক থেকে এবং বিশেষত ইহুদি ও জিপসিদের মৃত্যু ক্যাম্প হিসেবে এর ছিল বিশেষ ভূমিকা। (কৌশলগতভাবে বললে বলতে হয় যে জার্মানদের গ্যাস চেম্বারের স্থানটি ছিল নিকটবর্তী বিরককেনাউ নামক স্থানে। এটি ক্রীতদাস এবং শ্রমিকদের মৃত্যু শিবির হিসেবেও ব্যবহার হয়। এখানে স্থান পায় ইহুদি, পোল্যান্ডের রাজনৈতিক বন্দিরা, বিভিন্ন যুদ্ধক্ষেত্র থেকে আসা যুদ্ধবন্দি, এবং সাধারণ অপরাধীরা।
নতুন আসা বন্দিদের প্রতিনিয়তই একথা জানানো হতো যে এখানে থেকে মুক্তির একটিমাত্র রাস্তা হচ্ছে চিমনি পথটি। অবশ্য সত্যিকার ভাবে এটিও সত্য কথা ছিল না। লাখ লাখ মানুষ সেখানে মারা যায়, বেঁচে যাওয়া দশ হাজারের মতো মানুষ বাস করতো সেখানে, শিবিরের অমানুষিক কাজে শ্রম ব্যয় করতো, অবিরাম ধারায় চিৎকার করতো আর একটি আচ্ছন্ন অবস্থায় থেকেও বেঁচে থাকতে সচেষ্ট থাকতো এবং সেই নিদারুন সময়গুলোতেও তাদের জীবনে প্রেম এসেছে!
এই বেঁচে থাকার মর্মান্তিক প্রয়াসে যারা শেষ পর্যন্ত সফল হতে পেরেছিলো, তারা দেখেছে কীভাবে পুরুষ ও নারী জীবনমৃত্যুর ছায়াতলে বসবাস করে পরস্পরকে ভালোবেসেছে। তাদের স্মৃতিতে মাখামাখি হয়ে আছে মৃত্যুর অদ্ভুত গন্ধ আর মানুষের পোড়া দেহের ভস্ম। (চলবে)