একাদশ পরিচ্ছেদ
পিপের বদ্ধমূল ধারণা হলো তার এই পরিবর্তনের মূলে নিশ্চয় রয়েছেন মিস হ্যাভিসহাম, অন্য কেউই নয়।
লন্ডন রওয়ানা হবার একদিন পূর্বে তাই সে গেল সেই রহস্যপুরীতে।
মিস হ্যাভিসহাম আরো বুড়ো হয়েছেন।
তাকে দেখে হাসলেন। বললেন,
বাসরে তুমি তো বাপু দেখতে শুনতে একেবারে বড়োসড়োটি হয়ে উঠছো।
পিপ বললো,
আমি লন্ডন যাচ্ছি, তাই যাবার আগে আপনাকে একবার দেখতে এলাম।
বেশ করেছো। মি: জাগারসের সঙ্গে আমার গতকাল দেখা হয়েছে। দত্তক নেয়ার পরও কিন্তু তোমার নাম তোমারই থাকবে। এই ভালো হয়েছে। খবরদার নাম পাল্টাবে না পিপ।
মিস হ্যাভিসহাম আবার হাসলেন , বললেন,
বিদায় পিপ।
বিদায়।
পিপ বললো তার মনের কথা। বললো আপনাকে কোন দিনই ভুলতে পারবো না আমি।
পিপ চলে গেলো লন্ডনে। কিন্ত তার মন পড়ে থাকলো জো আর বিডির কাছে।
লন্ডনে পৌঁছেই সে গেলো মি: জাগারসের অফিসে।
সেখানে তার সাথে আলাপ হলো মি; উইমিকের সঙ্গে।
তাকে দেখে তিনি বললেন,
মি: জাগারস তো এখন কোর্টে। আপনি বুঝি মি: পিপ?
পিপও পাল্টা জবাবে বললো,
আপনিই বুঝি মি: উইমিক?
মি: উইমিক বললেন,
মি: জাগারসের সঙ্গে আপনার পরে দেখা করলেও চলবে। আপনার এখন খুঁজেপেতে বার করা উচিত মি: হার্বাট পকেটকে।
তার সঙ্গেই আপনি থাকবেন ঠিক হয়েছে, না?
হ্যাঁ। আপনি জানেন নাকি, মি: পকেট কোথায় থাকেন?
মি: উইমিক বললেন
তাঁর ঠিকানা তো হ্যামারস্মিথ, লন্ডন। এখান থেকে সোজা পাঁচ মাইল পশ্চিমে।
লন্ডনেই আছে পিপ।
মি: হার্বাট পকেটের সঙ্গী হয়ে পিপ ভদ্রলোকের শিক্ষাদীক্ষায় পরিপক্ব হতে চলেছে।
মি: পকেটের জ্ঞানগরিমা প্রচুর।
পিপ তার সাহচর্যে অনেক কিছু শিখতে লাগলো।
একদিন মি: পকেট বললেন,
আমার একটা মূলধন হলেই হলো। সোজা বেরিয়ে পড়বো ইন্ডিয়ার পথে। ব্যবসা করবো। বুঝলে ব্যবসা?
পিপ জিজ্ঞেস করলো,
খুব বুঝি লাভ ওখানকার ব্যবসায়?
হাজার গুণ, সোজা হাজার গুণ।
পিপ বুঝতে পারলো মি: পকেটের আর যতোই না বিদ্যাবুদ্ধি থাকুক, টাকাপয়সার দিক দিয়ে স্বাবলম্বী নয় সে।
একদিন সে সরাসরি জিজ্ঞেস করলো,
হার্বাট, তোমার এখানকার চাকরিতে লাভালাভের অংক বুঝি খ্বুই কম?
ঠিক তা নয় পিপ। ওতে আমার এখানকার সব খরচপাতি চলে যায়। সে তো কম নয়, তাই।
পিপ মনে মনে স্থির জানতো মিস হ্যাভিসহামই তার উপকারি সুহৃদ।
এ সময় তাই তার মনে হলো, একবার তাদের মধ্যে গেলে বেশ হয়।
তারা দেখতে পেতেন সে কেমন পাল্টে গেছে, আগের চেয়ে কতো সুন্দর হয়েছে দেখতে।
যেই ভাবা, সেই কাজ।
পিপ চলে এলো বাড়িতে।
পরদিন রহস্যপুরীতে।
মিস হ্যাভিসহাম পিপকে দেখিয়ে সরাসরি স্টেলাকে জিজ্ঞেস করলেন,
কি স্টেলা, পিপ কি আগের চেয়ে ভদ্র হয়নি, সুন্দর হয়নি? না আগের মতোই গেঁয়ো বুনোই রয়ে গেছে!
স্টেলাতে জড়তা নেই একফোঁটাও।
বললো,
পাল্টায়নি আবার! খুব পাল্টিয়েছে!
পিপ তো এখন পুরোদস্তুর শহুরে ভদ্রলোক।
তারা দুজনে বেড়িয়ে বেড়ালো বাগানময়।
পিপ বললো,
স্টেলা, মনে আছে, আমাকে কেবলি কাঁদাতে চাইতে তুমি?
পিপ অবাক হলো, স্টেলা অম্লানমুখে বললো,
কই, আমার কিছু মনে নেই!
তারপর আবার বললো,
পিপ, মনে রাখবে, মানুষের আত্মা আমার মধ্যে নেই।
তাই কিছু মনেও থাকে না আমার!
কি অবাক করা কথা এগুলো? পিপ অবাক হয়ে পড়ে!
ওরা ফিরে আসে মিস হ্যাভিসহামের কাছে।
মিস হ্যাভিসহাম জনান্তিকে পিপকে জিজ্ঞেস করলেন,
স্টেলাকে দেখে কি মনে হয় তোমার?
পিপও বললো আস্তে আস্তে,
ভারি সুন্দর দেখতে হয়েছে!
তক্ষুণি অদ্ভুত গলায় মিস হ্যাভিসহাম বললেন,
ওকে তুমি ভালোবাসবে! তোমার হৃদয় ভেঙে দলে পিষে ফেললেও ভালোবাসবে।
যদি সে আরো ঘৃণা করে তাকে আরো ভালোবাসবে তুমি?
পিপ কি বলবে?
নীরব নিস্তব্ধ সে শুনে গেলো তার কথা!
কী অদ্ভুত তেজ আর জ্যোতি ফুটে উঠেছে আজ মিস হ্যাভিসহামের চোখে। চেয়ে চেয়ে পিপ তাই দেখতে থাকলো।
ওদিকে স্টেলা একলা একলা বাগানময় পায়চারী করে বেড়াচ্ছে।
কোনদিকেই তার দৃষ্টি নেই, আকর্ষণ নেই।
পিপের ভারি অবাক লাগে তাকে দেখে। (চলবে)