ষষ্ট পরিচ্ছেদ
তিনি তখন অন্যদিকে তাকিয়ে। পিপ তার কথা শুনছে কি শুনছে না, কোনদিকে নজর নেই। বললেন, ‘একেক সময় ভারি একলা লাগে আজকাল। কি মনে হয় জানো? মনে হয়, কেউ খেলুক আমার সামনে। কেউ ছুটোছুটি করুক আমার এখানে। কি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুনছো তখন থেকে? খেলতে পারো না? এতো সব জিনিষ ছড়ানো, এ নিয়ে খেলতে পারো না?
পিপের মাথা ঘুরতে লাগলো। রহস্যপুরীর এই মহারানি এসব কি বলছেন? ধীরে ধীরে সে বললো, স সব নতুন লাগছে আ আমার কাছে। খে খেলবো কি কি করে?
মিস হ্যামিসহাম বললেন, তোমার কাছে সব নতুন লাগছে? কিন্তু এসব আমার কাঝে কতো কতো পুরাতন! একটু ভেবে নিয়ে তাকে বললেন, বেশ, তা’হলে স্টেলাকে ডাকো স্টেলা এলো। মহারাণী বললেন, এখানে বসে বসে তোরা তাস খেল, আমি দেখবো। তুই..
তিনি কথা শেষ করতে পারলেন না, স্টেলা বাধা দিয়ে চেচিঁয়ে উঠলো, ‘ঐ ছিচকে খোকার সাথে বসে তাস খেলবো আমি? গায়ে খেটে খাওয়া মজুর ছেলের সঙ্গে বসে! তবু তারা বসলো তাস হাতে নিয়ে! হ্যাভিসহাম মনে মনে বললেন, এই হয়েছে! এই করেই ভাঙবে তো ছেলেটার মন!
পিপকে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, বাড়িতে কি নিয়ে খেলাধূলা করো তুমি? বিপাকে পড়লো পিপ। কি বলবে সে? তার খেলাধুলো করবার সময় কোথায় যে সে কোনকিছু নিয়ে খেলবে?
বললো, কিছু নেই। তাছাড়া আমি তো খেলাধুলা করিনে। এমন সময় স্টেলা মুখ খুললো, কথার মাঝখানেই ফস করে সে বলে বসলো,
কি বিশ্রী মোটা আঙুৃল ছিচকে খোকার। কী চেহারা! কী পোষাক! বুটেরই কী বাহার!!
মিস হ্যামিসহাম হঠাৎ পিপকে বললেন,
পিপ, স্টেলার মুখে অনেক কথাই তো শুনলে? এখন বলো তো শুনি, স্টেলা মেয়েটা তোমার কাছে কেমন লাগলো?
পিপের চোখ স্টেলার উপর। মিস হ্যাভিসহামের দিকে না তাকিয়ে অসহায় কণ্ঠে বললো, ‘আমি বলতে পারবো না’। ভীষণ আমুদে হ্যাভিসহাম। তবু গোঁ ধরেই রইলেন, বেশ তো জোরেসোরে বলতে না চাও, উঠে এসো, আমার কানে কানে বলে যাও না, শুনে রাখি।
পিপ আর কি করে, উঠে এলো। মিস হ্যাভিসহামের কানে কানে বললো সে এক অসমসাহসিক কথা।
‘ও কিন্তু খুব সু-সুন্দরী দেখতে’।
মিস হ্যাভিসহামের চোখে পলক নেই। জানতে চাইলেন আরো, আর কিছু বলবে? পিপ একটু ভেবে নিয়ে বললে, তবে খুব খিটখিটে!
খেলা শেষ হলো। মিস হ্যাভিসহাম স্টেলাকে বললেন, পিপকে নীচে নিয়ে যাও। ওকে খেতে দিয়ো।
নীচে নিয়ে স্টেলা পিপকে যেভাবে মাখন আর রুটি দিলো- তাতে পিপের কান্না পেয়ে গেলো। কিন্তু সে মাথা ধরে দেয়ালে ঘেসে দাঁড়িয়ে রইলো নির্বাক মুখে। এতো করেও স্টেলার ঝাঁজ শেষ হলো না। সে বললো,
কান্না পেয়েছে? তবে কাঁদো না কেন?
কান্না পেয়েছে? কে বলেছে যে আমার কান্না পেয়েছে? কখখনো না। কখখনো না।
ততোক্ষণে মুখ ঢেকে ছুটে চললো পিপ বাগান পেড়িয়ে গেটের দিকে। স্টেলা আর এলো না তার কাছে। দূরের থেকেই বললো,
বললেই হলো কান্না পায়নি তোর? নিশ্চয় পেয়েছে! আমি জানি, কাঁদতে কাঁদতেই বাড়ি গিয়ে পৌঁছবি তুই। দেখিস, ঠিক দেখিস!
কী নিষ্ঠুর খেয়ালী মেয়েটা!
পিপ দৌড়ে চললো.... দৌড়েই ফিরে চললো বাড়ির দিকে। (চলবে)