ঘুমের ইতিকথা
পর্ব-২
রিচস্কাফেনের কথায়, ‘ইদুঁরগুলো কেন মারা গেল, তা আমরা জানি না।’ এমন অবস্থা কি ঘুম সম্পর্কিত বিজ্ঞানের আওতায় পড়ে? প্রাণীর মৌলিক চাহিদার একটি হচ্ছে খাদ্যগ্রহণ। ইদুঁরগুলোর বেলায় দেখা যায় যে, সেগুলো না খেয়ে ১৬ দিন পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে। এ থেকে বোঝা যায় যে, খাদ্যগ্রহণের মতো ঘুমও প্রাণীর অস্তিত্বের জন্যে একই রকম গুরুত্বপূর্ণ একটি চাহিদা।
তবে এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা এই দৃশ্যত সহজ প্রশ্নটির উত্তর থেকে বহু দূরে রয়েছেন যে, ঘুম আদতে আমাদের কি উপকার করছে। অবশ্যই এক্ষেত্রে অনুমানের কোন শেষ নেই। যারা অনিদ্রায় ভোগেন তারা আশা করেন যে, চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকলে ভালো লাগতে পারে। মানুষের অভিজ্ঞতালব্ধ ও সাধারণ জ্ঞানগত উক্তির ওপর ভিত্তি করেই ঘুম সম্পর্কিত অধিকাংশ জনপ্রিয় তত্ত্বের প্রসার ঘটেছে। যেহেতু ঘুমের পর জেগে ওঠে আমাদের ক্লান্তি দূর হয়ে যায়, সেহেতু কিছু গবেষকের মত হচ্ছে বিশ্রামের জন্যেই ঘুমের দরকার হয়।
মিশিগান ওয়াকল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের অবৈতনিক প্রফেসর হ্যারল্ড জেপেলিন এর মতে ঘুম হচ্ছে, দেহের শক্তি সংরক্ষণের একটি বাধ্যতামূলক উপায়। তিনি আরো বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন ২৪ ঘন্টাই কর্মশীল থাকতে পারি না। সে কারণে বিবর্তনের ধারায় এই প্রতিদিনের বিশ্রাম আমাদের নিতে হয়।’
অবশ্য অন্যান্যরা এমন প্রস্তাবনাও দেন যে, মানুষ যেহেতু পশুরাজ্যের অধিপতি নয়, সেকারণে রাতের বেলা হিংস্র জন্তু-জানোয়ারর হাত থেকে রক্ষা পেতে বিবর্তনের ধারাবাহিকতায় মানুষ ঘুমিয়ে থাকে। মানুষ ঘুমে অচেতন থাকে বলে রাতের প্রকৃতির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে সে মুক্ত থাকে।
ছোটখাট প্রাণী, যেমন ইদুঁর জাতীয় তীক্ষ্ম দাঁতবিশিষ্ট প্রাণীর রয়েছে উচ্চমাত্রার বিপাকক্রিয়ার প্রবণতা এবং ক্ষুদ্রান্তের জ্যামিতিক কার্যকারণে এরা আনুপাতিকহারে বেশি শক্তি খরচ করে। দেহের তাপের দ্রুত ক্ষয়কে পুনর্গঠিত করতে প্রাণী ঘুমায়।
তবে বড় আকারের প্রাণীদের বেলায় ঘুমের মাধ্যমে যে শক্তি সঞ্চিত হয় তা এতোই কম যে তাত্ত্বিক দিক থেকে এরা কেন ঘুমায় তা বলা বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। (চলবে)